বাণীব্রত চক্রবর্তী ও অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনে পথে নামল পড়ুয়ারা। সোমবার জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলার ময়নাগুড়ি পদমতি ইউনিয়ন রহিমুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় এবং পুঁটিমারি মথুরামোহন হাইস্কুেল এমন ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। পদমতি ইউনিয়ন রহিমুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বয়কট করে গেট আটকে বিক্ষোভ দেখায়। পরে তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিপত্র জমা দেয়। পুঁটিমারি মথুরামোহন হাইস্কুলের পড়ুয়ারা মিছিল করে একই দাবিতে। মিছিলের পরেই স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক এর তীব্র প্রতিবাদ জানান স্কুলের সামনে। নেতৃত্ব দেওয়া এক প্রাক্তন ছাত্রকে স্কুলের ভেতরে আটকে রেখে মুচলেকা নেওয়া হয় তাঁর কাছ থেকে। স্কুলের টিচার ইনচার্জ রণদাপ্রসাদ রায় বলেন, ‘পুরো ঘটনা আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।’ ডিআই (উচ্চমাধ্যমিক) বালিকা গোলে বলেন, স্কুল পড়ুয়াদের কখনোই এরকম করার কথা নয়। এর পেছনে কোনও মদত রয়েছে কি না খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
পুঁটিমারি মথুরামোহন হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এদিন ১১টা নাগাদ স্কুলের সামনে থেকেই মিছিল শুরু করে। মিছিল থেকেই স্লোগান ওঠে, যোগ্য শিক্ষকদের স্কুলে ফেরাতে হবে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে এলাকায় ঘুরে স্কুলে ফেরে পড়ুয়ারা। তবে, স্কুলে আর ক্লাস হয়নি। এদিকে, ছেলেমেয়েদের মিছিলে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কয়েকজন অভিভাবক। তাঁরা মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া জনৈক প্রাক্তন ছাত্রকে আটকে স্কুলে নিয়ে যান। স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই প্রাক্তন ছাত্রের কাছ থেকে ‘ভুল হয়েছে’ বলে মুচলেকা নেন। অভিভাবক সুবল রায় বলেন, ‘ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সে মিছিল দেখে আগেই বাড়ি ফিরে গিয়েছে।’ অভিভাবক রতন দেবনাথ বলেন, ‘আমার ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র। কেন মিছিলে গেল, স্কুল কর্তৃপক্ষকে িজজ্ঞাসা করলাম। টিচার ইনচার্জ জানেন না বাইরে থেকেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মিছিল বের করা হয়েছে।’
পদমতি ইউনিয়ন রহিমুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ুয়ারাও ক্লাস বয়কট করে স্কুলের গেট আটকে বিক্ষোভ দেখায়। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মৌসুমি রায়ের কথায়, ‘এমনিতেই স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা খুব কম। তার মধ্যে চলে গেলেন আরও তিনজন শিক্ষক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনতেই স্কুল বয়কট করেছি।’ এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে স্কুল থেকে রিকদেব রায়। তার বক্তব্য, ‘স্কুলের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে। সেই কারণেই এই আন্দোলন।’ দশম শ্রেণির ছাত্রী মমতা সেন বলে, ‘যোগ্য শিক্ষকরা স্কুলে ফিরে আসুন। সেটাই জানাতে চাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। টিচার ইনচার্জকে জানিয়েই মিছিল করা হয় এদিন।’
শিক্ষক-শিক্ষিকা সংখ্যা কম থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্কুলের টিচার ইনচার্জ অবিনাশচন্দ্র রায়। তিনি বলেন, স্কুল পড়ুয়ারা এদিন স্কুল বয়কটের কথা জানিয়ে আমাকে একটি দাবিপত্র জমা দেয়। তাতে দাবি করা হয়েছে, অবিলম্বে স্কুলে যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফেরাতে হবে। পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে।’ স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আন্দোলন বড় কথা নয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংখ্যা একেবারেই কম। এখন বিজ্ঞান এবং অঙ্ক পড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেড়ে গেল। আমরা আলোচনায় বসে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করব।’