সৌরভ দেব ও অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: ঠিক যেন কোনও সিনেমা। মাদকের কারবারে লক্ষাধিক টাকা বকেয়া। তাই মাদক কারবারিরা টোপ দিয়ে দুই ব্যক্তিকে অসমে নিয়ে যায়। সেখানে দুই বন্ধু পৌঁছাতেই তাদের আটক করে বকেয়া টাকা মেটাতে কারবারের মূল পান্ডারা মুক্তিপণ দাবি করে। মঙ্গলবার রাত থেকে নিখোঁজ বেরুবাড়ি এলাকার দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে গিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) পুলিশের হাতে এসেছে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে উদ্ধার হওয়া দুই ব্যক্তি মাদকের চোরা কারবারে পুরোনো মামলায় অভিযুক্ত। অপহরণের মামলায় দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার হিসেবে দেখিয়ে পুলিশ তাদের আদালতে পেশ করেছে।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, ‘আমরা জানতে পারছি পুরোনো কোনও লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের কাছে অসমের কেউ টাকা পেতেন। দুজনকে টোপ দিয়ে সেখানে নিয়ে গিয়ে পরিবারের কাছে টাকা চেয়ে ফোন করা হয়েছিল। আমরা অসম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের উদ্ধার করেছি।’
হাসপাতালে রোগী দেখতে যাওয়ার নাম করে বেরুবাড়ির বাসিন্দা সফিকুল হক এবং ধনঞ্জয় বিশ্বাস মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তারপর আর বাড়ি ফেরেননি। মঙ্গলবার রাত থেকে দুই ব্যক্তির পরিবারের কাছে তাঁদেরই নম্বর থেকে ফোন আসে। পরিবারের অভিযোগ, ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিরা দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা দিতে না পারলে তাঁদের দুজনকে মেরে ফেলার পর্যন্ত হুমকি দেওয়া হয়।
সেই অপরহণকারীরা নিজেদের অসমের বাসিন্দা হিসেবে দাবি করে। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে যে নম্বর দেওয়া হয়েছে টাকা পাঠানোর জন্য সেটি অসমের গোঁসাইহাট থানার অন্তর্গত ছাগুলিয়া এলাকার। জলপাইগুড়ি পুলিশ দ্রুত অসম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। অসম পুলিশ অপহরণকারীদের একজনের বাড়িতে হানা দেয়। সেখান থেকে অপহরণকারীদের পরিবারের এক সদস্যকে আটক করা হয়। সেই খবর সফিকুল এবং ধনঞ্জয়কে পণবন্দি করে রাখা অপহরণকারীদের কাছে পৌঁছে যায়। যেখানে তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল সেখানেও অসম পুলিশ হানা দেয়। অসম পুলিশের হানার খবর পেয়ে ডেরা থেকে জলপাইগুড়ির দুই ব্যক্তিকে নিয়ে অপহরণকারীরা পালায়। সেই সময় সফিকুল এবং ধনঞ্জয় কোনওভাবে অপহরণকারীদের নজর এড়িয়ে দুজন আলাদা আলাদাভাবে পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি পুলিশের একটি টিম দুই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অসম সীমান্ত বক্সিরহাট এলাকাতে পৌঁছায়। অপহরণকারীদের হাত থেকে পালিয়ে সফিকুল বাড়ি ফেরার জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করে। চালককে জানান বাড়ি পৌঁছে টাকা মেটাবেন। সেই ভাড়া গাড়ি নিয়ে বুধবার গভীর রাতে তিনি নিজের বাড়িতে পৌঁছান। অন্যদিকে, ধনঞ্জয় পালিয়ে কোনওভাবে ফালাকাটা এসে পৌঁছান। পরবর্তীতে পুলিশের যে টিম উদ্ধারের জন্য অসম সীমান্তে পৌঁছেছিল তারাই ধনঞ্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে ফালাকাটা থেকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানতে পারে অসমে যারা তাদের আটকে রেখেছিল তারা মাদকের কারবারি। ইয়াবা, গাঁজা সহ বিভিন্ন ধরনের নেশার সামগ্রী এই দুজন অসমের ওই মাদক কারবারিদের থেকে নিয়ে বাংলাদেশে পাচার করত। ইতিপূর্বে এই দুজনের নামে মাদক পাচারকারী হিসেবে মামলাও রয়েছে। এরা বহুদিন আগে অসম থেকে কোনও মাদক জাতীয় দ্রব্য নিয়ে এসেছিলেন। যার টাকা মাদক কারবারিদের কাছে বকেয়া রয়েছে। বহুদিন ধরে সেই টাকা এই দুই ব্যক্তি পরিশোধ না করায় তাদের টোপ দিয়ে অসমে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল সেখানকার মাদক কারবারিরা। যদিও সফিকুল এবং ধনঞ্জয়ের পরিবার মাদক পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ধনঞ্জয়ের স্ত্রী মাম্পি বিশ্বাস বলেন, ‘আমার স্বামী টোটো চালান। কিন্তু কোনও খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত নন। সফিকুল তাঁকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।’