Jalpaiguri | মহালয়ার প্রাক্কালে রেডিও সারাইয়ের ধুম

Jalpaiguri | মহালয়ার প্রাক্কালে রেডিও সারাইয়ের ধুম

শিক্ষা
Spread the love


অনীক চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: ইন্টারনেটের যুগ। স্মার্টফোন, ল্যাপটপে বুঁদ হয়ে থাকা নতুন প্রজন্মের কাছে রেডিও নিজের গুরুত্ব হারিয়েছে অনেককাল আগেই। জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরের অধিকাংশ বাড়িতে রেডিও নামক যন্ত্রটাই উধাও। থাকলেও সেটি কী অবস্থায় রয়েছে কেউ খোঁজ নিয়ে দেখেন না। কিন্তু এখনও রেডিওর গুরুত্ব ফিরে আসে মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে, বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর…’ শোনার তাগিদে।

মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপুজোর সরাসরি কোনও যোগ নেই। পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে দেবীপক্ষের শুরুর দিনটি হল মহালয়া। এই দিনে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেন অনেকে। কিন্তু মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপুজো ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে যায় তখনই, যখন অল ইন্ডিয়া রেডিও ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নামে একটি সংগীতালেখ্য সম্প্রচার করা শুরু করে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ তাঁর উদাত্ত অথচ সুরেলা কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ করে বাঙালির হৃদয়হরণ করেন।

মহালয়া আর রেডিওর রোমান্টিসিজমের গল্প দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে। টিভিতে বা ওটিটিতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ দেখে বা শুনে যেন মন ভরে না কারও। তাই মহালয়ার প্রাক্কালে রেডিও সারাইয়ের বিভিন্ন দোকানে লাইন পড়েছে জলপাইগুড়ি শহরে। শুধু সারাই নয়, অনেকে নতুন রেডিও কিনছেন। জেলা ও শহরের বেশ কয়েকটি রেডিও সারাইয়ের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রেডিও সারানোর ক্ষেত্রে প্রত্যেকে ডেডলাইন দিয়েছেন ২০ সেপ্টেম্বর। কারণ পরের দিন মহালয়া।

এই মুহূর্তে দম ফেলার ফুরসত নেই রেডিও মেকানিকদের। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় দেড়শোর বেশি রেডিও সারিয়েছেন শহরের চার কারিগর। দিনবাজারের রেডিও কারিগর ভজন দত্ত বললেন, ‘আধুনিক রেডিওর পাশাপাশি ৪০-৫০ বছর পুরোনো রেডিওর মডেলও আসছে। সারাবছর বাড়িতে পড়ে থেকে রেডিওগুলো অকেজো হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে বয়স্করা রেডিও সারাতে আসছেন।’

কিন্তু, বয়স্ক ছাড়া নতুন প্রজন্মের কেউ কি আসছেন রেডিও সারাতে? উত্তরটা, হ্যাঁ। কদমতলার একটি রেডিও সারাইয়ের দোকানের সামনে দেখা হল কলেজ পড়ুয়া স্নেহাশিস চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, দাদু-ঠাকুমার মুখে মহালয়ার সকালের গল্প শুনেছেন। এবছর তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার পরিকল্পনা করেছেন। সেই কারণেই সারাতে এসেছেন বাড়ির পুরোনো রেডিও।

মাষকালাইবাড়ির রেডিও সারাইয়ের আরেক কারিগর রঞ্জন দাসের কথায়, ‘এখন রেডিও ছাড়া অন্যকিছু সারাইয়ের সময় পাচ্ছি না। গত দু’বছরে রেডিও সারাইয়ের চাহিদা বেড়েছে। মানুষ রেট্রো হতে চাইছে।’ তিনি এখনও পর্যন্ত সত্তরের বেশি রেডিও সারাই করেছেন বলে জানালেন। তাঁর দোকানে রেডিও সারাই করতে এসেছিলেন জয়ন্ত দাস। তিনি বললেন, ‘অনেকদিন শোনা হয়নি। তবে রেডিওটা ভালোই রয়েছে। সাউন্ডের বোতামে একটু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু ওইদিনের জন্য বিন্দুমাত্র রিস্ক নিতে চাই না।’

রেডিও সারাইয়ে হাফসেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় বর্ষীয়ান রেডিও কারিগর কদমতলার গৌতম দাস। তিনি বললেন, ‘এত মানুষ রেডিওর ওপর ভরসা রাখছেন দেখে ভালো লাগছে। প্রতিবার মহালয়ার আগে কিছু মানুষ রেডিও মেরামতির জন্য দোকানে আসেন। কিন্তু এবার সংখ্যাটা অনেক বেশি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *