জলপাইগুড়ি ব্যুরো: আশ্চর্য সমাপতন বোধহয় একেই বলে। গত ১৮ জুন ভিলেজ পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ময়নাগুড়ি (Mainaguri) থানা এলাকার চূড়াভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলের ভিলেজ পুলিশ রামমোহন রায়। আর ২১ জুনই চামুর্চির সন্দীপ ছেত্রীকে সরিয়ে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সভাপতি করা হল তাঁকে। রামমোহন নিজে অবশ্য বলছেন, দল যে তাঁকে এত বড় দায়িত্ব দেবে, সেকথা আগে থেকে আঁচই করতে পারেননি তিনি।
দলের যুব সংগঠনের জেলা সভাপতির পদে রামমোহনের অভিষেক ঘিরে তৃণমূলের ঘরে-বাইরে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূলের অন্দরেই অনেকে মনে করছেন, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে ময়নাগুড়ি আসনে রামমোহনের মনোনয়ন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আবার অনেকে মনে করছেন, জেলায় যুব সংগঠনে পরিচিত রাজবংশী মুখ আনতেই রামমোহনকে এই পদে বসানো হয়েছে।
শনিবার বিকেলে জলপাইগুড়িতে দলের জেলা দপ্তরে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা ছিল জেলা তৃণমূল যুবর। সন্দীপ ছেত্রীর সভাপতিত্বে সেই সভা শেষ করে সবাই বাড়ি ফেরার আগেই দলীয় ফেসবুক পেজে তালিকা পোস্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয় সন্দীপকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, রামমোহনের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নতুন নয়। ২০১২ সালে ভিলেজ পুলিশ পদে নিয়োগের আগে কলেজে টিএমসিপি নেতা হিসেবে নজর কেড়েছিলেন। চাকরিতে থাকাকালীনও রামমোহনকে ঘিরে বিতর্ক ছিল সবসময়ই। কখনও থানায় তাঁর জন্য আলাদা চেম্বার বা গাড়ি ব্যবহার করা নিয়ে বিতর্ক। আবার কখনও তাঁর নামে চলা ফ্যান ক্লাবের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক। বিরোধী দলের নেতারা রামমোহনের বিরুদ্ধে লরি-ডাম্পার সিন্ডিকেট থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। আবার ভিজেল পুলিশ রামমোহনের ‘দাপট’ ভালো চোখে দেখত না ময়নাগুড়ির শাসকদলের নেতাদের একটা বড় অংশও। এবারে তাঁকেই দলীয় বড় পদে বসানোয় ময়নাগুড়িতে তৃণমূলি রাজনীতির সমীকরণ নিয়েও দলের ভেতর চর্চা শুরু হয়েছে।
আর যাঁকে ঘিরে এত জল্পনা, সেই রামমোহন বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণেই ১৮ জুন চাকরি ছেড়েছিলাম। ভাবিনি দু’দিন পরেই দল আমাকে এত বড় দায়িত্ব দেবে। দলীয় সৈনিক হিসেবে লড়াইয়ের ময়দানে আমার সবটুকু উজাড় করেই দেব।’
যুব সংগঠনে রদবদল হলেও মহিলা ও শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি পদে যথাক্রমে নুরজাহান বেগম এবং তপন দে-কেই ফের বসানো হয়েছে। দলের অন্দরমহলের অনুমান, সংখ্যালঘু অঙ্কে নুরজাহানের চেয়ার রক্ষা পেয়েছে। আর তপনকে পদ দিয়ে দলের আরেক নেতা কৃষ্ণ দাসকে বার্তা দিয়েছে দল। তবে এই রদবদল নিয়ে দলের জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।