শুভাশিস বসাক, ধূপগুড়ি: জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) রানিনগরে আধাসেনার ক্যাম্পের আবাসনে এক স্কুল ছাত্রীকে দু’দিন ধরে আটকে রেখে মাদক খাইয়ে ধর্ষণের (Rape) অভিযোগ উঠল। ঘটনায় অভিযুক্ত আধাসেনার এক জওয়ানের ছেলে। ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলাজুড়ে। ওই নাবালিকা ছাত্রীকে মাদক খাইয়ে নেশায় আচ্ছন্ন করে কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। আধাসেনা জওয়ানের ওই নাবালক ছেলেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। নাবালিকাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য জলপাইগুড়ি মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়ে সে বান্ধবীর বাড়িতেই থাকবে বলে জানিয়ে যায়। এর আগেও এমন হওয়ায় পরিবারের কারও কিছু মনে হয়নি। কিন্তু বুধবার রাতে মেয়েটি তার বাবাকে ফোন করে জানায়, তাকে রানিনগর বিএসএফ ক্যাম্পের একটি কোয়ার্টারে আটকে রাখা হয়েছে এবং তার উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। মেয়ের ফোন পেয়ে ভীত ওই পরিবার জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্যা মমতা সরকার বৈদ্যকে গোটা ঘটনা জানায়৷ তখনই ফোনে মমতা ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।
জেলা পরিষদ সদস্যার সক্রিয়তায় বুধবার রাতেই জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি সঞ্জয় দত্তের নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী সহ ক্যাম্পের গেটে যায়। কিন্তু তাদের কাউকেই ওই রাতে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। উলটো একাধিক প্রোটোকল রয়েছে বলে টানা চার ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) সেনা জওয়ানের ছেলের অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে মাদক খাওয়ার ভিডিও ছিল। (যদিও উত্তরবঙ্গ সংবাদ ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি)। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ সমস্ত ভিডিও নিজেদের হেপাজতে নিয়েছে।
জেলা পরিষদের সদস্যা বলেন, ‘ভাবতে অবাক লাগছে, যারা দেশের নিরাপত্তা দিচ্ছে, তাদের ক্যাম্পের আবাসনেই মাদক নিয়ে নেশা করা হচ্ছে। কীভাবে নাবালিকার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটল ক্যাম্পের আধিকারিকরা তা দেখলেন না। উলটো গেটে দাঁড় করিয়ে রেখে মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য এতটা সময় নিলেন।
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘এর আগেও ও বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে থেকেছে। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটেনি৷ এবারে কী এমন ঘটল যে এত বড় সর্বনাশ হয়ে গেল।’
পুলিশ সূত্রে খবর, ছেলেকে ক্যাম্পের আবাসনে রেখে ওই আধাসেনা জওয়ান তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বিহারে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। ছেলে একাই আবাসনে ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব হওয়ার সূত্রে সে ওই ছাত্রীকে আবাসনে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানেই মাদক খাওয়ানো এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে সারা সকাল আধাসেনা ক্যাম্পের কোয়ার্টারগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। নিগৃহীতার পরিবার ধূপগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছে, কয়েকজন মিলে ঘটনাটি ঘটিয়েছে৷
প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনায় আরও কারা যুক্ত? তারাও কি ওই ক্যাম্পের বাসিন্দা নাকি বাইরে থেকে আসা অভিযুক্তের বন্ধু? আধাসেনা ক্যাম্পে এত নিরাপত্তা সত্ত্বেও এরকম বড় ঘটনা ঘটে গেল কীভাবে? আধাসেনা আধিকারিকরা কেন দু’দিন ধরে কিছুই জানতে পারলেন না। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, ‘নাবালিকাকে ক্যাম্পের আবাসন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’
মমতা এদিন বলেন, ‘ভিডিও দেখে যা বোঝা যাচ্ছে তাতে ব্রাউন সুগার সহ একাধিক নেশার আসর বসানো হয়েছিল। ক্যাম্পের ভিতরের ঘটনা যাতে বাইরে না আসে, তাই হয়তো পুলিশকে প্রথমে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে আধাসেনার কয়েকজন আধিকারিক অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের জন্যই নাবালিকাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।