অনীক চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: স্বাধীনতা দিবস হোক বা প্রজাতন্ত্র দিবস, এইসব বিশেষ দিনে ভারতীয় হিসাবে দেশের জন্য বিশেষভাবে গর্ববোধ করতে ইচ্ছে হয়। আর পাঁচটা সাধারণ দিনের থেকে একটু অন্যভাবে এই দিনগুলি কাটাতে চান সকলেই। সঙ্গে থাকে ছুটির মুড। সাম্প্রতিক সময়ে এইসব বিশেষ দিনে নিজেদের সাজপোশাকেও একটু নতুনত্ব আনতে পছন্দ করছে যুব সম্প্রদায়। দেশের গণতন্ত্র কিংবা সার্বভৌমিকতার উদযাপনেও ফ্যাশনকে গুরুত্ব দিতে ইচ্ছুক তারা। তবে সবই কি শুধু দেশকে ভালোবেসে! নাকি অন্য সবকিছুর মতোই ভারতবাসীর দেশপ্রেমের প্রকোষ্ঠেও ঢুকে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া আর সেলফির মায়াজাল!
রবিবার ভাতরবর্ষের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস। তাই ট্রেন্ড মেনে প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে পোশাক নিয়ে মেতেছে জলপাইগুড়িও (Jalpaiguri)। শহরের বিভিন্ন দোকান ঘুরে বেড়াতেই দেখা গেল, সাদা পাঞ্জাবির চাহিদা এখন তুঙ্গে। স্কুল কিংবা কলেজের পড়ুয়ারা তো আছেই। তার পাশাপাশি দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন শহরের শিক্ষক সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। দেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে রং মিলিয়ে এবার প্রজাতন্ত্র দিবসে সাদা ছাড়াও গেরুয়া ও সবুজ পাঞ্জাবিও ট্রেন্ডিং বলে জানালেন জলপাইগুড়ির ব্যবসায়ী উদয় মণ্ডল, দীপঙ্কর বণিক, হীরালাল রায়ের মতো অনেকেই।
দীপঙ্কর এবিষয়ে বলেন, ‘অন্যান্যবার প্রজাতন্ত্র দিবসে পাঞ্জাবির এতটা চাহিদা দেখিনি। আগে মহিলাদের অনুষ্ঠানের জন্য তেরঙা ওড়না বিক্রি হত বেশি। কিছুক্ষেত্রে সাদা চুড়িদারও কিনতেন অনেকে। কিন্তু এবার সাদা, গেরুয়া, সবুজ ও হলুদ পাঞ্জাবি ভালোই বিকোচ্ছে।’ তবে এই ট্রেন্ডে যে কেবল যুব সম্প্রদায় গা ভাসাচ্ছে তা নয়। মধ্যবয়সিরাও বিশেষ দিনে নিজেদের সাজিয়ে তুলবেন সাবেকি পাঞ্জাবিতে। পাঞ্জাবি কিনতে আসা এক চাকরিজীবী শ্রেয়স চক্রবর্তীর কথায়, ‘আগে প্রজাতন্ত্র দিবসে অনেকেই পাঞ্জাবি পরতেন না। এবার আমাদের অফিসের সিনিয়ার সহকর্মীরা বললেন ২৬ জানুয়ারি সকলে মিলে সাদা, গেরুয়া এবং সবুজ রংয়ের পাঞ্জাবি পরে পতাকা উত্তোলন করব। এতে নাকি ছবি ভালো উঠবে। আমিও সবার সঙ্গেই হুজুকে তাল মিলিয়ে একটা গেরুয়া পাঞ্জাবি কিনে নিলাম।’
তবে কি কেবল সমাজমাধ্যমে দেশপ্রেম উদযাপনের মুহূর্ত তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য! ভাবনাটা থেকেই যাচ্ছে। নেট দুনিয়ার ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েই দিনটি পালন করবেন বলে আশা করে রেখেছেন অনেক শহরবাসী। সেই কারণেই রং মেলানো পোশাক কেনার হিড়িক শহরের বিভিন্ন বাজারে। ছুটির দিনের জন্য মিলিয়ে-মিশিয়ে জাতীয় পতাকার থিমে পোশাক কিনছে নয়া প্রজন্মের দলও। এছাড়া বিভিন্ন দেশি খাদি ও সুতির পাঞ্জাবির চাহিদাও রয়েছে। ৩০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে সেসব। শহরের কদমতলায় আড্ডা দিচ্ছিলেন রাহুল, ধ্রুব, আবিররা।
এবিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হলে আবির বলেন, ‘স্কুল শেষ হওয়ার পর আর সেভাবে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করিনি। ভাবলাম এবার অন্যভাবে দিনটি কাটাই। তাই আমাদের দলের সকলেই সাদা পাঞ্জাবি পরে, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দিনটি পালন করব।’ সবমিলিয়ে শেষে ঘুরেফিরে আসছে সেই সোশ্যাল মিডিয়া। এবার প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে ছেলেদের মধ্যে পাঞ্জাবি কেনার ঝোঁক কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এদিন শহরে ফুটে উঠল এমনই ছবি। তেরঙা পাঞ্জাবিতে কিংবা পোশাকে সেজে দেশের সংবিধান, ঐতিহ্যকে মর্যাদা দেওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে দেখা গেল গণতন্ত্রের উৎসব উদযাপনের ছবি তুলে স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জনপ্রিয় হওয়া। যুগের নিয়মে সেই হাওয়াতেই গা ভাসাতে কার্যত তৈরি তিস্তাপারের বাসিন্দাদের নানা প্রজন্ম।