পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তরফে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) রাজবাড়ি বাদে অন্যান্য ঐতিহাসিক সম্পত্তি এখনও হেরিটেজ স্বীকৃতি পায়নি। এমনকি, জলপাইগুড়ি পুরসভা এবং প্রশাসনও জলপাইগুড়ির ওপর হেরিটেজ রোডম্যাপ তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু পিছিয়ে থাকেনি জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের ইংরেজি নতুন বছরের ক্যালেন্ডারে জায়গা পেল জলপাইগুড়ির ঐতিহ্য। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন এলাকার মন্দির, মসজিদের ছবি সংকলনে তৈরি হল ক্যালেন্ডার। বছরের বারো মাসে জেলার ১২টি স্থাপত্যকে তুলে ধরা হয়েছে।
ইতিহাসের গ্রাসে পড়ে অনেক স্থাপত্য, ভাস্কর্য হারিয়ে গিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেকগুলো হারিয়ে যাওয়ার পথে। পরবর্তী প্রজন্ম যাতে জেলার ঐতিহ্যকে ভুলে না যায়, সেজন্য পুলিশের এই অভিনব ভাবনা। ক্যালেন্ডারে জায়গা পাওয়া স্থাপত্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রান্তির চেকেন্দা ভাণ্ডারী মন্দির, জল্পেশ শৈবতীর্থ, ময়নাগুড়ির পেটকাটি মন্দির। শুধু মন্দির নয়, রয়েছে ইংরেজ আমলে তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্যও। মালবাজারের ইংরেজ প্ল্যান্টার্সদের কবরখানা, যেটি ২০০ বছরের পুরোনো, এককালে দোমোহনিতে অবস্থিত বেঙ্গল-ডুয়ার্স রেলওয়ের সদর কার্যালয়ও জায়গা পেয়েছে ক্যালেন্ডারে।
শিকারপুরের সন্ন্যাসী মন্দির, যা দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের মন্দির নামে পরিচিত। এছাড়া নাগরাকাটার ইউরোপিয়ান ক্লাব, জলপাইগুড়ি শহরের স্টেশন রোডের চুনসুরকির স্থাপত্যে তৈরি ভাটিয়া বিল্ডিং এবং কোচবিহার মহারাজার তৈরি আয়রন হাউসের ছবিও দেখা যাবে ক্যালেন্ডারে।
তবে শুধু ছবি নয়, স্থাপত্য সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা তথ্যও লেখা রয়েছে ছবির নীচে। যেমন, ইউরোপিয়ান ক্লাবের আরেক নাম নাগরাকাটা ক্লাব। এই ক্লাবের প্রবেশদ্বারে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। উত্তরবঙ্গে রেল যোগাযোগের প্রথম সারিতে দোমোহনি থেকে বার্নিশঘাট রেলপথ প্রতিষ্ঠিত হয়।
জেলা পুলিশের এই উদ্যোগকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছেন সকলে। প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা বললেন, ‘নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন কবে স্বীকৃতি দেবে, সেই আশায় না থেকে জেলা পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’
জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত জানান, প্রতিবছর বিভিন্ন ছবি দিয়ে ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়ে থাকে। এবার একটু অন্যরকম কিছু করার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। বললেন, ‘জেলার স্থাপত্য, হেরিটেজ সম্পত্তি, ঐতিহাসিক নিদর্শনকে এবার ক্যালেন্ডারে ছাপিয়ে প্রকাশিত করা হয়েছে। আমরা চাই, জেলার বর্তমান প্রজন্ম জেলার ইতিহাস বিষয়ে আগ্রহী হোক।’