অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ হল জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) মাল ব্লকে ডামডিং গ্রাম পঞ্চায়েতের রানিচেরা টিজি জুনিয়ার হাইস্কুল (Ranichera T.G Junior Excessive Faculty)। গত ২৫ জুন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিষয়টি ঘোষণা করেছে জেলা শিক্ষা দপ্তর। ওই স্কুলে কর্মরত তিন শিক্ষককে ডেপুটেশনে অন্যান্য স্কুলে বদলি করা হল।
২০১০ সালে রানিচেরা টিজি জুনিয়ার হাইস্কুল সরকারি অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১১ সাল থেকে পুরোদমে পঠনপাঠন শুরু হয়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে চতুর্থ শ্রেণি পাশ করার পর পড়ুয়ারা ওই স্কুলে ভর্তি হত। কিন্তু সেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে ২০১৬ সাল থেকে। পড়ুয়া সংখ্যা ক্রমেই কমতে শুরু করে। করোনাকালে তা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে। এরপর আর পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়নি।
২০২২ সালে ওই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল মাত্র ৯ জন পড়ুয়া। ২০২৩ সালে ৭ জন। যার মধ্যে মাত্র দুজন অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি পার করে যথাক্রমে ৩৭ ও ২১ জন। কিন্তু ২০২৪ ও চলতি বছরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে একজন পড়ুয়াও ওই স্কুলে ভর্তি হয়নি। আর পাঁচটা সরকারি স্কুলের মতোই ওই স্কুলের পড়ুয়ারাও সমস্ত সুযোগসুবিধা পেত। তা সত্ত্বেও কেন পড়ুয়ারা ভর্তি হল না? স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, সঠিকভাবে পঠনপাঠন হত না, পরিকাঠামোগত অভাবও ছিল। স্কুলের শিক্ষকরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে পড়ুয়া সংগ্রহের চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি।
শিক্ষকদের বক্তব্য, বেসরকারি স্কুলের চাকচিক্যে কৌলীন্য হারিয়েছে রানিচেরা টিজি জুনিয়ার হাইস্কুল। চা বাগানের শ্রমিক মহল্লার অভিভাবকরাও এখন বাচ্চাদের ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়াতে চান। প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে অভাবের কারণে অনেক পড়ুয়া যেমন পড়াশোনা ছেড়ে কাজে ঢুকছে, তেমন আবার অনেকে গ্রামের সাদামাঠা সরকারি জুনিয়ার হাইস্কুল ছেড়ে শহরের বড় সরকারি অথবা বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। জলপাইগুড়ি জেলার প্রচুর স্কুল পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ হয়ে রয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজ্য সরকার ৬৪টি স্কুলকে ‘বিলুপ্তপ্রায়’ ঘোষণা করে। শিক্ষা দপ্তরের তথ্য বলছে, গত দশ বছরে প্রায় ৭ হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হয়েছে। রানিচেরা টিজি জুনিয়ার হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিনোদ লামাকে অস্থায়ীভাবে ডেপুটেশনে বদলি করা হয়েছে সাইলি উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখানেই ডেপুটেশনে যোগ দেবেন আরও এক সহ শিক্ষক দীপক পাসোয়ান। আর এক শিক্ষক সুব্রত তিওয়ারিকে পাতিবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনজনকেই আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা দপ্তর।
জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (উচ্চমাধ্যমিক) বালিকা গোলে বলেন, ‘প্রশাসনের তরফে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ুয়া সংগ্রহের চেষ্টা হয়েছিল। তারপরেও পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি। রাজ্য শিক্ষা দপ্তরকে সবটাই জানানো হয়েছে।’