অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: ক্ষতি যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না তিস্তাপাড়ের ক্ষিতীশ মণ্ডলের। খামখেয়ালি আবহাওয়ার কোপে পড়ে লোকসানের মুখে পড়তে হয় ভুট্টা, বাদাম চাষে। ভেবেছিলেন তিস্তায় নৌকা চালিয়ে রুজি-রোজগার করে সপরিবার দিনগুজরান করবেন। বাড়ির গোরু বেচে নৌকা বানিয়ে জীবিকার খোঁজে নামলেও যেন ‘হালে পানি’ পাচ্ছেন না কিছুতেই। সব মিলিয়ে চরম দৈন্যদশা হতদরিদ্র পরিবারের (Jalpaiguri)।
একইরকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বিষ্ণু, গোবিন্দদের। এবার বর্ষায় সেভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষের মধ্যে আশানুরূপ আগ্রহ নেই নৌকাবিহারে। তাই সওয়ারির আশায় তিস্তাপাড়ের মাঝিদের কার্যত চাতকের দশা। তবে শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে আশার আলো দেখছেন ওঁরা।
ক্ষিতীশদের মতো এই এলাকার অনেকে চাষের বিকল্প পেশা হিসেবে নৌকা চালান। আষাঢ়ের প্রখর রোদে এ বছর তিস্তাপাড়ের চাষিরা লাভের মুখ দেখেননি। বৃষ্টির অভাবে ভুট্টা, বাদাম চাষে নেমে সেচের জল দিয়ে শেষরক্ষা হয়নি। শেষ ভরসা ছিল নৌকা। তাতেও আশা পূরণ হল না, আক্ষেপ করছেন মাঝিরা৷
এবিষয়ে ক্ষিতীশ বলেন, ‘ভুট্টা চাষ করেছিলাম ৪ বিঘা জমিতে। শ্রমিক, ঝাড়াই মিলিয়ে প্রায় ৪৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। লাভ করেছি মাত্র ২ হাজার টাকা। প্রতিবছর যেখানে বিঘাপ্রতি ফলন হয় ১২ থেকে ১৪ কুইন্টাল, সেখানে এ বছর হয়েছে মাত্র ৬ কুইন্টাল। বাদাম চাষেও ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। এরপর আর কোনও ফসল লাগাইনি। ভেবেছিলাম নৌকা চালিয়ে স্বামী-স্ত্রীর চলে যাবে। তাই বাড়ির গোরু বিক্রি করে, ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে নৌকা বানাই। কিন্তু এখন সব গেল। গোরুটা থাকলে অত্যন্ত দুধ বিক্রি করতে পারতাম৷’
অন্যদিকে, নৌকাবিহারে লোকের দেখা না মেলায় হতাশ বাকিরাও। গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘তিস্তায় প্রতিবছর নৌকো চালিয়ে লাভ হয়। এবার শ্রাবণ মাস চলে এলেও নদীতে জল দেখা গেল না। ঘুরতে এসে তাই কেউ নৌকায় চড়তে চান না। খালি বসে দু’-একটা ছবি তুলে চলে যান। ভারী বৃষ্টি শুরু হলে আশা করছি, মহালয়ার আগে লাভের মুখ দেখব।’
মাঝিরা জানালেন, নৌকা পারাপারের জন্য মাথাপিছু ৫০ টাকা করে ভাড়া ধার্য হয়েছে৷ তবে, ১ নম্বর স্পার থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত গেলে ১০০ টাকা উপার্জন হয় তাঁদের।
তিস্তার পাড়ে বেড়াতে আসা রিমা তিওয়ারি বলেন, ‘চারিদিক কাশফুলে ছেয়ে থাকলে নৌকাবিহার একটা আলাদা অনুভূতি দেয়৷ এখন তেমন জল নেই। তাই নৌকায় চড়িনি৷’