জয়গাঁ: পার্শ্ববর্তী জেলা কোচবিহার থেকে জয়গাঁয় এসে মাদকের মস্ত কারবার ফেঁদে বসেছিলেন বিধান বিশ্বাস। দীর্ঘদিন থেকেই তাঁর ওপর নজর ছিল জয়গাঁ থানার পুলিশের। রবিবার রাতে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই চিকিৎসককে। আর সেই কারবারে বিধানকে সংগত দিয়ে এসেছেন তাঁর স্ত্রী মমতা বিশ্বাস। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকেও।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, দন্ত চিকিৎসক বিধানের ক্লিনিক লাগোয়া ওষুধের দোকানের আড়ালেই প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেদারে বিক্রি হত কাফ সিরাপ। আর সেই ওষুধের দোকান চালাতেন বিধানের স্ত্রী। আর ওষুধের দোকান থেকে কাফ সিরাপ বিক্রি হলে চট করে সন্দেহ হওয়ারও কথা নয়।
দাঁতের চিকিৎসক হিসেবে বিধান জয়গাঁর দাড়াগাঁওয়ে দোকানঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। প্রথমে একটি ছোট ঘরেই চিকিৎসা করতেন তিনি। তখন ওষুধের দোকান ছিল না। প্রথম দেড় বছর কোচবিহার থেকে সপ্তাহে দু’দিন এসে চিকিৎসা করতেন। এরপর পাকাপাকিভাবে জয়গাঁতে বসবাস শুরু করেন। প্রতিবেশী বা ক্লিনিকের আশপাশের লোকজন, কারও সঙ্গেই খুব একটা ঘনিষ্ঠতা ছিল না বিধান বা মমতার। সেকারণে কেউই তাঁদের ক্লিনিকের আড়ালে কী কারবার চলছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাত না।
প্রথমে ছোট মেচিয়াবস্তিতে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী। চিকিৎসকের বাড়ির পরিজন, সন্তানদের কখনও দেখেননি বাসিন্দারা। পাঁচ থেকে ছয় বছর ভাড়া ছিলেন এই এলাকায়। তবে লকডাউনের সময় চিকিৎসক ও তাঁর স্ত্রী, কেউই এই এলাকায় ছিলেন না। বলছেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তাঁরা আবার আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নির্মলা বর্মনের কথায়, ‘এখনও তাঁর মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়ার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। এসব করে কম টাকা তো রোজগার করেননি। কিন্তু তাঁর জীবনযাপনে সেকথা বোঝা যেত না।’ লকডাউনের পর বিধান ছোট মেচিয়াবস্তি ছেড়ে দাড়াগাঁও চলে যান। সেখানে বাড়ি ভাড়া নেন।
আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলেও তাঁর ওষুধের দোকান রাত ১০টা-সাড়ে ১০টা অবধি খোলা থাকত। ক্লিনিক সংলগ্ন এলাকার এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘দেখতাম দোকানের শাটার অর্ধেকের বেশি নেমে যেত রাত ৯টার দিকে। কিন্তু পুরো নামানো হত না। এখন মনে হয়, রাত বাড়লে রোগী সেজে কাফ সিরাপের খদ্দেররা আসত। নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানেই সেবন করাও চলত।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধান সেই কাফ সিরাপ বাইরে থেকে আনাতেন। অনুমান, মালদা থেকে আসত এই কাফ সিরাপ। আবার কোচবিহার-যোগের কথাও উড়িয়ে দিতে পারছে না পুলিশ। শনি ও মঙ্গলবারে এলাকায় হাট বসে। আর সেদিনই বেশি ভিড় হত সেই ওষুধের দোকানে। প্রচুর ভুটানি নাগরিকের আনাগোনা ছিল। জয়গাঁর অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার মানবেন্দ্র দাস বলেন, ‘মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’