ইটাহার: এক গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে ঘটনার সপ্তাহখানেক পর নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়াল ইটাহার থানার ছয়ঘরা গ্রামে। পরকীয়ার পরিণতিতেই কি মৃত্যু ওই বধূর? এই উত্তর খুঁজতেই স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার ৮ দিন পর, শুক্রবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে ওই বধূর পচাগলা দেহ তুলে ময়নাতদন্তে পাঠাল পুলিশ। মৃত মহিলার নাম রেশমা খাতুন (২৫)।
ইটাহারের বিডিও দিব্যেন্দু সরকার বলেন, ‘এক মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর প্রশাসনকে না জানিয়ে তাঁর দেহ কবরস্থ করা হয়েছিল। মৃতার স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে আজ ওই মহিলার দেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হল।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছয়ঘরার ক্যানালপাড়ার বাসিন্দা রাহিদুর আলির বিয়ে হয়েছিল পাশের দক্ষিণ শ্যামপুর গ্রামের রেশমা খাতুনের সঙ্গে। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বছর বারোর বড় ছেলে গাজোলের একটি মাদ্রাসায় থেকে পড়াশোনা করে। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক রাহিদুর কেরলে চলে যাওয়ার পর থেকে বাড়িতে ছোট ছেলে বছর সাতের রেহান ও দশ মাসের মেয়েকে নিয়ে থাকছিলেন রেশমা। ক্যানালের ধারে মূল জনবসতি থেকে খানিকটা দূরে প্রায় ফাঁকা জায়গায় বাড়ি রাহিদুরের। গত ১০ জুলাই সেই বাড়িতেই আচমকা রেশমার গলায় ফাঁস লাগানো মৃতদেহ দেখতে পান পরিজন ও প্রতিবেশীরা। ওইদিন তাঁর মৃত্যু নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ তোলেননি। ফলে পুলিশ বা প্রশাসনকে কিছু না জানিয়েই প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় রেশমার মৃতদেহ কবরস্থ করে দেন পরিবারের সদস্যরা। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে দিনকয়েক পর বাড়ি ফেরেন রাহিদুর। স্ত্রীর মোবাইল ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়েই তাঁর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। এরপরেই রাহিদুর তাঁর স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন প্রতিবেশী এক তরুণের বিরুদ্ধে। ইটাহার থানায় এই মর্মে অভিযোগ জানানোর পরেই শুক্রবার দুপুরে কবরস্থান থেকে মৃতদেহ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
রাহিদুর বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে পাড়ার আবদুল রহিম নামের এক তরুণের সম্পর্ক ছিল। স্ত্রীর মোবাইল ফোন ঘেঁটেই তা জানতে পেরেছি। ওইদিন রাতে আবদুল আমাদের বাড়িতে এসেছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আবদুল রহিমই আমার স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য দায়ী। তাই আমি কবর থেকে দেহ তুলে গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়েছি। স্ত্রীর মৃত্যুর বিচার চাই আমি।’
এদিকে, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এদিন বিকেলেই গ্রামের বাড়ি থেকে আবদুল রহিম নামে ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইটাহার থানার আইসি সুকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, আইনানুগ সমস্ত ব্যবস্থা নিয়ে ঘটনার যথাযথ তদন্ত শুরু করা হয়েছে।