সানি সরকার, শিলিগুড়ি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তেমন কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বস্ত উত্তর সিকিম পর্যটনে এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। মূলত বেহাল সড়ক ব্যবস্থার জন্য পর্যটকশূন্য লাচেন থেকে লাচুং, ইয়ুমথাং ভ্যালি থেকে থাংগু। উত্তর সিকিম যেখানে বন্ধ, সেখানে পুজো পর্যটনে কত পর্যটক পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ রয়েছে পাহাড়ি রাজ্যটিতে। তবে, এই মেঘ দূরে ঠেলে দিতে তৎপর হয়ে উঠছে সিকিমের পর্যটন উন্নয়ন নিগম। দু’দিন ধরে চলছে বাগডোগরা-বুর্তুক (Bagdogra-Burtuk) হেলিকপ্টার সার্ভিস (Helicopter Service)। সেনাবাহিনীর হেলিপ্যাডগুলি ব্যবহার করে পুজো পর্যটনে উত্তর সিকিমের ক্ষেত্রেও এই পরিষেবা চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে সিকিমের পর্যটন দপ্তর। দু’বছর বন্ধ থাকার পর গত রবিবার থেকে পাহাড়-সমতল হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু হতেই উত্তর সিকিমের ক্ষেত্রে এই পরিষেবা চালুর দাবি তুলেছিল বিভিন্ন পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন। তাতে সিলমোহর পড়তে পারে পুজোর দিনগুলিতে। সিকিম পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান লুকেন্দ্র রসাইলি বলছেন, ‘বাগডোগরা ও বুর্তুকের মধ্যে হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু হয়েছে। এই উদ্যোগে পর্যটকরা খুশি। রাজ্যের বাকি অংশেও হেলিকপ্টার সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে অবশ্যই উত্তর সিকিম রয়েছে।’
বর্তমান সময়ে ‘ডেস্টিনেশন সিকিম’-এর ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় উত্তর সিকিম। তুষারপাত থেকে পুজো পর্যটন, পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে লাচেন থেকে লাচুংয়ে। কিন্তু ’২৩-র সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয়ের পর থেকেই বিধ্বস্ত উত্তর সিকিম পর্যটকশূন্য। কবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে সিকিম প্রশাসন, মুখিয়ে রয়েছেন পর্যটকরা। অপেক্ষায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কেননা, উত্তর সিকিম বন্ধ থাকায় ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের। পর্যটন ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত মে মাসের শেষের দিকে পর্যটক প্রবেশে উত্তর সিকিম খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একাধিক জায়গায় ধস নামায় বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন সড়কপথ। বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েন প্রচুর পর্যটক। তাছাড়া ১ জুন ছাতেনে সেনাছাউনির ওপর ধস নামায় নিখোঁজ হন ছয় সেনাকর্মী। পরবর্তীতে তিন সেনাকর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পর্যটক, সাধারণ মানুষ, গাড়ির চালকদের উদ্ধারের পাশাপাশি সেনাকর্মীদের খোঁজে সাহায্য নেওয়া হয়েছিল বায়ুসেনার। ওই ঘটনার পরই নতুন করে বন্ধ হয়ে যায় উত্তর সিকিম।
কিন্তু বাগডোগরা ও বুর্তুকের মধ্যে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হওয়ায় এবং দুর্গাপুজোর কথা মাথায় রেখে উত্তর সিকিমের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে গ্যাংটকের মধ্যে এই পরিষেবা চালুর দাবি উঠছে। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘সিকিমের পর্যটন দপ্তরকে আমাদের তরফে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। উত্তর সিকিমে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হলে আমাদের দাবি পূরণ হবে।’ ট্রাভেলস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ সিকিমের সদস্য প্রেম প্রধান বলছেন, ‘লাচেন, লাচুংয়ে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হলে ওখানকার হোটেল ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আমাদের গাড়ির চালকরাও বাঁচবেন।’ উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি ও বাগডোগরার মধ্যে দিনে চারটি ট্রিপ রয়েছে।