উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মাথাব্যথা হয় না এমন মানুষ বোধহয় একজনও নেই (Headache)। প্রায় সব বয়সের মানুষই এর শিকার। অনেকে ব্যথা কমাতে বাম ব্যবহার করেন বা ফটাফট ওষুধ খেয়ে নেন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই। কিন্তু কেন মাথাব্যথা হচ্ছে সেটা জানা জরুরি। কারণ মাথাব্যথার ধরন থেকে বোঝা যায়, আদৌ আপনার শারীরিক কোনও সমস্যা রয়েছে কি না। তাই মাথাব্যথার ধরন বুঝে সেইমতো চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথার মধ্যে রয়েছে –
টেনশনজনিত মাথাব্যথা
এই ধরনের মাথাব্যথা সবচেয়ে পরিচিত। এক্ষেত্রে যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা হয়, প্রায়শই মনে হয় মাথার চারপাশে কোনও শক্ত ব্যান্ড বাঁধা রয়েছে।
সম্ভাব্য কারণ – স্ট্রেস, খারাপ অঙ্গভঙ্গি, ডিহাইড্রেশন, ঘুমের অভাব বা খাবার এড়িয়ে চলা।
কী নির্দেশ করে – গুরুতর কোনও স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত না করলেও দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস বা জীবনধারার কোনও কারণে প্রায়ই এই ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে।
প্রতিদিন নতুন ক্রমাগত মাথাব্যথা
একে সংক্ষেপে বলা হয় এনডিপিএইচ বা নিউ ডেইলি পারসিসটেন্ট হেডেক। এক্ষেত্রে প্রতিদিন হঠাৎ করে মাথাব্যথা শুরু হয়, যা কোনও উপশম ছাড়াই চলতে থাকে।
সম্ভাব্য কারণ – প্রকৃত কারণ অজানা। তবে সংক্রমণ, মাথায় আঘাত বা কোনও স্ট্রেসের ঘটনা থেকে এনডিপিএইচ হতে পারে।
কী নির্দেশ করে – স্নায়বিক সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে, তবে সেজন্য পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন।
উচ্চ রক্তচাপজনিত মাথাব্যথা
রক্তচাপ যখন স্বাভাবিকের থেকে বিপজ্জনকভাবে উচ্চমাত্রায় পৌঁছায় তখনই এই ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
সম্ভাব্য কারণ – মস্তিষ্কের রক্তনালিতে চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে হতে পারে। এই বর্ধিত চাপ ভেসোডাইলেশন (রক্তনালির প্রশস্ত হওয়া)-এর কারণ এবং রক্তপ্রবাহ সীমিত করে। ফলে ব্যথা ও অস্বস্তি হয়।
কী নির্দেশ করে – আপনার রক্তচাপ যে বিপজ্জনকভাবে উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে এই ধরনের মাথাব্যথা তারই উল্লেখযোগ্য লক্ষণ।
মাইগ্রেন
তীব্র, ধকধক করা এই ধরনের মাথাব্যথা সাধারণত মাথার একপাশে হয়ে থাকে। সঙ্গে বমি বমি ভাব, বমি এবং শব্দ ও আলোর প্রতি সংবদেনশীলতা হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণ – হরমোনের পরিবর্তন, কিছু খাবার, পরিবেশগত কারণ এবং ঘুমের অভাব।
কী নির্দেশ করে – মাইগ্রেন বংশগত হতে পারে এবং মস্তিষ্কের স্নায়বিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এছাড়া ডিপ্রেশন বা উদ্বেগের মতো মুড ডিসঅর্ডারের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে।
ক্লাস্টার মাথাব্যথা
এটি খুব যন্ত্রণাদায়ক মাথাব্যথা, যা চক্রাকাের বা গুচ্ছাকারে ঘটে। এক্ষেত্রে এক চোখের চারদিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে এবং সঙ্গে চোখ লাল হওয়া বা নাক বন্ধ হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণ – প্রকৃত কারণ অজানা। তবে হাইপোথ্যালামাসের অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে, যা শরীরের বায়োলজিক্যাল ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে।
কী নির্দেশ করে – চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই ধরনের মাথাব্যথা সবথেকে যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা বলে বিবেচিত হয়। যদিও ক্লাস্টার মাথাব্যথা বিরল। এটি সার্কাডিয়ান ছন্দের ব্যাঘাতের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
সাইনাস মাথাব্যথা
সাইনাস ক্যাভিটিতে প্রদাহ বা সংক্রমণের ফলে সাইনাস মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এতে কপাল, গাল ও নাকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়।
সম্ভাব্য কারণ – সাইনায় ইনফেকশন, অ্যালার্জি বা ঠান্ডা লাগা।
কী নির্দেশ করে – সাইনাসের অন্তর্নিহিত অবস্থা নির্দেশ করে, যার জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।
রিবাউন্ড মাথাব্যথা
ব্যথানাশক ওষুধ অতিরিক্ত ব্যবহার করলে রিবাউন্ড মাথাব্যথা হয়। তার ওপর যদি ওষুধ বন্ধ করে দেন তাহলে মাথাব্যথা আরও বাড়ে।
সম্ভাব্য কারণ – চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়াই ব্যথানাশক ওষুধের ঘনঘন ব্যবহার।
কী নির্দেশ করে – অতিরিক্ত ওষুধ ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। সেক্ষেত্রে আপত্তিকর ওষুধের মাত্রা কমাতে সুগঠিত পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়।
থান্ডারক্ল্যাপ মাথাব্যথা
এটা হঠাৎই হয়, কিন্তু মারাত্মক হয়। কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের মধ্যে সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছায়।
সম্ভাব্য কারণ – রক্তনালি ফেটে যাওয়া বা মেনিনজাইটিসের মতো গুরুতর অবস্থার লক্ষণ হতে পারে।
কী নির্দেশ করে – এই ধরনের মাথাব্যথা হলে সত্বর চিকিৎসার প্রয়োজন, কারণ তা সাবরাকনয়েড হেমোরেজের মতো প্রাণ সংশয়কারী অবস্থার ইঙ্গিত হতে পারে।
সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথা
এই ধরনের মাথাব্যথা সার্ভিকাল স্পাইন বা ঘাড়ের থেকে উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে ব্যথা ঘাড় থেকে শুরু হয়ে মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।
সম্ভাব্য কারণ – ঘাড়ে আঘাত, খারাপ অঙ্গভঙ্গি, সার্ভিকাল স্পাইনের অবক্ষয়জনিত পরিবর্তন।
কী নির্দেশ করে – ঘাড়ে পেশিবহুল সমস্যা নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে ফিজিকাল থেরাপি বা কাইরোপ্র্যাকটিক কেয়ার থেকে উপকার পেতে পারেন।
হরমোন সম্পর্কিত মাথাব্যথা
মাসিক, গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের সময় হরমোনের ওঠানামার কারণে এই ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণ – হরমোনের মাত্রা বিশেষত ইস্ট্রোজেনে পরিবর্তন মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করতে পারে, যে কারণে মাথাব্যথা হয়।
কী নির্দেশ করে – এই ধরনের মাথাব্যথা প্রায়ই চক্রাকারে হয়। সেক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।