হরিশ্চন্দ্রপুর: একুশে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে ধর্মতলায় কর্মসূচি রয়েছে। আর তা নিয়ে গত এক সপ্তাহ যাবৎ হরিশ্চন্দ্রপুরে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটে চলেছে। বৃহস্পতিবার হরিশ্চন্দ্রপুর সদরের মধ্যপাড়া এলাকায় রাস্তার ধারে একটি বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংবলিত একটি পোস্টার কে বা কারা ছিঁড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। শাসকদলের অভিযোগের তির অবশ্য সরাসরি বিজেপির দিকে। যদিও জেলার পদ্ম নেতাদের বক্তব্য, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
একুশে জুলাইয়ের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ হরিশ্চন্দ্রপুর। যে পোস্টারটি ছেঁড়া হয়েছে সেখানে মমতার পাশাপাশি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের সভাপতি সাহেব দাস এবং শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ হালদারের নাম ছিল। তার পরেই শাসকদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায়। তাঁদের বক্তব্য, সদর এলাকায় বিজেপির ভোটব্যাংক বেশি। একুশে জুলাইয়ের প্রচার বানচাল করতে পদ্ম শিবিরই নাকি এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
সাহেব বলেন, ‘এ ধরনের নোংরা কাজ বিজেপি ছাড়া আর কারও হতে পারে না। আমরা সকালে ঘটনাটি দেখতে পাই। বিজেপির নেতা-কর্মীরাই রাতের অন্ধকারে কাজটা করেছে বলে মনে করি।’ বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি পালটা বলেন, ‘বিজেপি এই ধরনের পোস্টার ছেঁড়া রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তাছাড়া হরিশ্চন্দ্রপুরে ওঁদের দলের গোষ্ঠীকোন্দলের কথা সকলেরই জানা। তৃণমূলের কোনও কর্মী-সমর্থকরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’
গত কয়েকদিন ধরেই আসন্ন একুশে জুলাইয়ের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরগরম হরিশ্চন্দ্রপুরে। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তাজমুল হোসেনের সঙ্গে শাসকদলের জেলা পরিষদ সদস্য বুলবুল খান প্রস্তুতি সভা চলাকালীন একে অপরের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে প্রকাশ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। শুধু তাই নয়, গত ১৩ জুলাই তৃণমূলের কিষান খেতমজুর সংগঠনের জেলা সম্মেলন হয়। ওই সংগঠনের জেলা সভাপতি আবার মন্ত্রী স্বয়ং। আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও ওই সম্মেলনে দেখা যায়নি বুলবুলকে।
হরিশ্চন্দ্রপুরে তাজমুল ও বুলবুলের মধ্যে যে একটা ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে তা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। যদিও ফেস্টুন ছিঁড়ে দেওয়ার ঘটনায় বুলবুল একবারও দলের কাউকে দায়ী করেননি। তিনি নিশানায় নিয়েছেন বিজেপিকে। তবে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে হরিশ্চন্দ্রপুরের টিকিট কে পাবেন তা নিয়ে চাপা গুঞ্জন চলছে। দলের একাংশের বক্তব্য, গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে শাসকদলের আশানুরূপ ফল হয়নি। একাধিক পঞ্চায়েতে যেমন ভরাডুবি হয়েছে তেমনই লোকসভায় তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় হরিশ্চন্দ্রপুরে সেভাবে ভোট পাননি।
অন্যদিকে, বুধবার হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় দলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি বিশ্বজিতের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এবার তৃণমূল সুপ্রিমোর ছবি সংবলিত পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা যেন নয়া বিতর্ককে উসকে দিল।