Harimadhav Mukherjee | বিদায় মঞ্চেও মাধব-মহাকাব্য

Harimadhav Mukherjee | বিদায় মঞ্চেও মাধব-মহাকাব্য

শিক্ষা
Spread the love


পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: এ দৃশ্য সাম্প্রতিককালে কখনও দেখেনি বাংলা।

মঞ্চে শেষশয্যায় অভিনেতা। নিথর তাঁকে ঘিরে আরও অনেক অভিনেতা। যাঁদের অনেকেই অভিনয় করেছেন প্রয়াতের সঙ্গে। ওখানেই শোকের মধ্যে একজন চেঁচিয়ে উঠে বললেন তাঁর বিখ্যাত নাটক দেবাংশীর অতি চেনা সংলাপ। তিনি শহরের পরিচিত অভিনেতা দীপঙ্কর চৌধুরী। ‘তুই মুক নাম ধরে ডাকবা পারিস না? সবসময় দেবতা দেবতা ভাব করিস ক্যান?’

দেবাংশী নাটকে হরিমাধব মুখোপাধ্যায় (Harimadhav Mukherjee) তাঁর স্ত্রী চরিত্রের অভিনেত্রী মোক্ষদাকে বলেছিলেন কথাগুলো।

তখনই সেরা মুহূর্ত তৈরি হয়ে গেল উত্তরবঙ্গের নাটকের সর্বকালের অন্যতম সেরা চরিত্র হরিমাধবের শেষযাত্রার।

প্রাণের প্রিয় সেই বিখ্যাত ত্রিতীর্থের মঞ্চে হরিমাধব। সব চোখ তাঁর দিকে। শুধু তিনি নিজে আর কোনও কথা বললেন না।

এখন কলকাতায় এমন ব্যক্তিত্ব চিরবিদায় নিলে তাঁকে নিয়ে শোকমিছিল হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক পার্টির নেতারাও দলবল নিয়ে আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। দক্ষিণ দিনাজপুরের দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব একজন কেন্দ্রের মন্ত্রী, একজন রাজ্যের। সুকান্ত মজুমদার বা বিপ্লব মিত্রেরা কেউই এদিন আসতে পারেননি শহরে। ফলে শেষযাত্রায় সেই অর্থে জনতার ঢল নামল না।

এসব যন্ত্রণা অবশ্য মুছে দিলেন শহরের নাট্যকর্মীরা। তাঁদের অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল। শহরের প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে এসেছিলেন জেলা শাসক, অতিরিক্ত জেলা শাসক ও পুরসভার চেয়ারম্যান।

সোমবার রাতে বিশেষ নাট্যধারার পথিকৃৎ হরিমাধবের প্রয়াণের খবর বালুরঘাটে ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতার এক নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। কলকাতার নাট্য নির্দেশক থেকে শুরু করে একাধিক অভিনেতা তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানান। মঙ্গলবার ভোররাতে কলকাতা থেকে রওনা হয়ে তাঁর মরদেহ বালুরঘাটে এসে পৌঁছায় দুপুর নাগাদ। রঘুনাথপুর এলাকায় গঙ্গারামপুর থেকে একটি বাতানুকূল শববাহী গাড়ি আগে থেকেই মজুত করা ছিল। সেখানেই তোলা হয় অভিনেতাকে। দুপুরের আগেই সংস্কৃতিপ্রেমী শতাধিক মানুষের ভিড় এলাকায়। আগে থেকেই সকলে ‘শেষ দেখা’ দেখতে উপস্থিত হয়েছেন।

শ্রদ্ধায়, শোকে সকলের মাথা নত। কারও হাতে ফুলের তোড়া, তো কারও চোখে শুধুই জল। বালুরঘাটের প্রতিটি নাট্য সংস্থা থেকে উপস্থিত অভিনেতারা। নিস্তব্ধতার মধ্য থেকেই যেন কান্নার রোল ভেসে আসছে চারদিক থেকে। তারপর হরিমাধবের দেহ নিয়ে আসা হয় বাস ভবনে। যেখানে অপেক্ষারত তাঁর স্ত্রী রিনা মুখোপাধ্যায়, দুই মেয়ে, এক ছেলে, জামাতা সহ পরিজনেরা। এলাকাজুড়ে এক শোকের আবহ।

সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বালুরঘাট কলেজে। যেখানে প্রায় ৩৪ বছর তিনি অধ্যাপনা করেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দেহ আসে সাধের ত্রিতীর্থ সংস্থায়।

বালুরঘাটের প্রবীণ নাট্য নির্দেশক প্রদোষ মিত্র বলছিলেন, ‘তাঁকে কেউ শ্রদ্ধা জানাতে চাইলে সংস্থায় আসার কথা মাইকে বলা হয়েছে। এদিন রঘুনাথপুর এলাকাতেই প্রচুর নাট্যপ্রেমী সহ সাধারণ মানুষ এসেছিলেন। তাঁর আশীর্বাদের হাত যেন আমাদের সকলের মাথার ওপরে থাকে।’ জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণার কথায়, ‘তিনি চলে গেলেও নাটকের প্রতি তাঁর উদ্যম ভালোবাসা তাঁর কাজের মাধ্যমে থেকে যাবে। পরবর্তীতে আমরা তাঁর কাজ সংরক্ষণের জন্য ভাবনাচিন্তা করব।’

শেষকৃত্যের জন্য খিদিরপুর শ্মশানে দেহ পৌঁছানোর পর দেখা গেল, সেখানেও অনেকের ভিড়। দূর থেকে সকলে হাতজোড় করে প্রণাম জানাচ্ছেন। চোখ ছলছল অনেক গুণমুগ্ধের। আর তিনি, হরিমাধব যেন কোনও অদৃশ্য বার্তায় সকলের কানে কানে ‘নাটকের জয় হোক’ বলে হারিয়ে গেলেন চরাচরে। বালুরঘাট, উত্তরবঙ্গ তাঁকে ভুলবে না।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *