Glaucoma | দৃষ্টি হারানোর আগে পরীক্ষা করান

Glaucoma | দৃষ্টি হারানোর আগে পরীক্ষা করান

শিক্ষা
Spread the love


উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: অন্ধত্ব একটি অভিশাপ, আর এই অন্ধত্বের অন্যতম কারণ গ্লকোমা (Glaucoma)। গ্লকোমাজনিত অন্ধত্বের কোনও প্রতিকার নেই, প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। এই রোগ সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক ও সচেতন করতে প্রতি বছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহকে বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়। গ্লকোমার কারণ, প্রতিরোধ এবং আধুনিক চিিকৎসাপদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন শিলিগুড়ির দ্য হিমালয়ান আই ইনস্টিটিউটের গ্লকোমা বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্বরূপকুমার রায়

গ্লকোমা কী

গ্লকোমা চোখের একটি জটিল রোগ যাতে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ (ইন্ট্রা অকুলার প্রেশার/ আইওপি) বৃদ্ধির কারণে চোখের স্নায়ুর ধীরে ধীরে ক্ষতি হয় এবং চোখের দৃষ্টি কমে যায়। এমনকি এতে একসময় অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সময়মতো ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করলে এই অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

কারণ

এই রোগে সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলেও এখনও অবধি চোখের উচ্চ চাপই এই রোগের প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে স্বাভাবিক চাপেও এই রোগ হতে পারে। চোখের উচ্চ চাপ ধীরে ধীরে চোখের স্নায়ুর ক্ষতি করে এবং দৃষ্টিকে ব্যাহত করে। তবে অন্যান্য কারণেও এই রোগ হতে পারে। যেমন –

  • যাঁদের গ্লকোমার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে
  • যাঁদের ডায়াবিটিস, থাইরয়েড বা হাইপারটেনশন রয়েছে
  • যাঁদের বয়স ৪০ বছরের বেিশ
  • অতীতে চোখে কোনও আঘাত থাকলে
  • যাঁরা অনেকদিন ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার করছেন
  • যাঁদের দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয় (চশমার মাইনাস পাওয়ার বেশি)

কী ধরনের অসুবিধা হতে পারে

১. ক্রমশ আশপাশের দৃষ্টিশক্তি (পেরিফেরাল ভিশন) কমে যাওয়া

২. আবছা দেখা

৩. চোখের বা মাথার যন্ত্রণা

৪. আলোর চারপাশে রঙিন আভা বলয়

৫. চশমার পাওয়ারের বারবার পরিবর্তন

গ্লকোমার ধরন

দীর্ঘস্থায়ী ওপেন এঙ্গেল গ্লকোমা

সাধারণত এই ধরনের গ্লকোমায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে চোখের ভিতরকার তরল (অ্যাকুয়াস হিউমার)-এর নিষ্কাশন ধীরে ধীরে অবরুদ্ধ হয়ে যায় ও অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়তে থাকে। এই ধরনের গ্লকোমায় রোগীর চোখে সাধারণত ব্যথা অনুভূত হয় না এবং খুব ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে।

ক্লোজড-এঙ্গেল গ্লকোমা

এই ধরনের পরিস্থিতিতে আকস্মিকভাবে চোখের তরল নিষ্কাশনপদ্ধতি সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হয়ে যায় (ক্লোজ অ্যাঙ্গল)। চোখে তীব্র প্রদাহ, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, বমি ভাব এবং চোখের দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী অবনতি হয়। এটি একটি আপৎকালীন পরিস্থিতি এবং এর দ্রুত চিকিৎসা অনিবার্য।

জন্মগত গ্লকোমা

এক্ষেত্রে জন্মের পর চোখের নিষ্কাশন ব্যবস্থার বিকাশ হয় না। এটি খুবই বিরল রোগ। প্রতি ১০,০০০ নবজাত শিশুর মধ্যে একটি শিশুর এই রোগ হতে পারে। বংশগত কারণেই প্রধানত এই রোগ হয়ে থাকে। অপারেশনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

সেকেন্ডারি গ্লকোমা

অনেক সময় অন্যান্য রোগ বা বিভিন্ন কারণে গ্লকোমা হতে পারে, যেমন-

  • ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন ও মাইগ্রেন
  • থাইরয়েডজনিত রোগ
  • নিদ্রাহীনতা
  • অতীতে চোখের কোনও আঘাত বা চোখের কোনও অপারেশন
  • দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ বা মলম বা চোখের ড্রপের ব্যবহার

নির্ণয়ের উপায়

চক্ষুবিশেষজ্ঞ দ্বারা চোখের সম্পূর্ণ পরীক্ষা এবং চোখের অভ্যন্তরীণ চাপের পরিমাপ করে গ্লকোমা নির্ণয় করা সম্ভব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় গ্লকোমার কোনও উপসর্গ বোঝা যায় না। সুতরাং, চোখ বাঁচাতে চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের বছরে একবার চোখ পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। গ্লকোমা নির্ণয়ের পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে –

১. টোনোমেট্রি বা চোখের চাপ নির্ণয়

২. গোনিয়োস্কোপি

৩. ওসিটি/ আরএনএফএল বা চোখের অপটিক নার্ভের পরীক্ষা

৪. প্যাকিমেট্রি

৫. পেরিমেট্রি বা ভিজুয়াল ফিল্ড পরীক্ষা

চিকিৎসা পদ্ধতি

গ্লকোমার চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে এর ধরন এবং চোখের অভ্যন্তরীণ চাপের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। প্রাথমিক পর্যায়ে বেশিরভাগ রোগীদের ক্ষেত্রেই মেডিকেশনের মাধ্যমে চোখের প্রেশার কমানো হয়ে থাকে। তবে অগ্রিম পর্যায় গ্লকোমার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বা লেসার ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।

বর্তমানে গ্লকোমার জন্য কিছু অত্যাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর সাফল্যের হারও ভালো। এইসব পদ্ধতি গ্লকোমা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

সিলেক্টিভ লেসার ট্র্যাবিকিউলোপ্লাস্ট্রি (এসএলটি লেসার) এসএলটি লেসার সাধারণ চোখের অভ্যন্তরীণ তরল নিষ্কাশন পদ্ধতিকে উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেসব গ্লকোমা রোগীর নিয়মিত ওষুধ ব্যবহারের পরেও চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আসে না তাঁদের ক্ষেত্রে এটি একটি উপযুক্ত পদ্ধতি।

ট্র্যাবিকিউলেক্টোমি সার্জারি – একটি ঐতিহ্যবাহী গ্লকোমা সার্জারি যা চোখের চাপ কমানোর জন্য চোখের অভ্যন্তরে একটি নতুন নিষ্কাশন পথ তৈরি করে। এটি সাধারণত অ্যাডভান্সড গ্লকোমার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

আহমেদ গ্লকোমা ভালভ সার্জারি – এই পদ্ধতিতে চোখের অভ্যন্তরে একটি ক্ষুদ্র ভালভ স্থাপন করা হয় যা চোখ থেকে তরল নিষ্কাশন করে চোখের প্রেশার কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

অ্যাডভান্সড মাইক্রোইনসিশন গ্লকোমা সার্জারি (i-stent) – i-stent একটি অত্যাধুনিক মাইক্রোইনভেসিভ গ্লকোমা সার্জারি পদ্ধতি যা গ্লকোমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এই নতুন ধরনের গ্লকোমা সার্জারির একাধিক সুবিধা রয়েছে।

যেমন, এটি একটি ক্ষুদ্র ছিদ্রের মাধ্যমেই চোখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। এতে চোখে আঘাত লাগার সম্ভাবনাও খুব কম। এই যন্ত্রটি নিয়মিত ছানি অপারেশনের সময়ই চোখের অভ্যন্তরে স্থাপন করা যেতে পারে। অতিরিক্ত কাটার প্রয়োজন হয় না। সার্জিকাল গ্রেড টাইটেনিয়ামের ব্যবহার এবং এটি প্রমাণিত ট্র্যাক রেকর্ড সার্জিরিটিকে চোখের জন্য নিরাপদ করে তোলে। এই i-stent সার্জারির মাধ্যমে গ্লকোমা রোগীর বর্তমানে ব্যবহৃত আইড্রপের সংখ্যা কমানো যেতে পারে।

মনে রাখবেন গ্লকোমা অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ যার কোনও প্রতিকার নেই। প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। তাই চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের পর অবশ্যই চোখ পরীক্ষা করান এবং নিশ্চিত হন আপনার বা আপনার পরিবারের কারও গ্লকোমা আছে কি না। গ্লকোমা প্রতিরোধ করুন এবং বেদনাদায়ক অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচুন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *