জয়ন্ত সরকার, গঙ্গারামপুর: ক্লাস নাইনে পড়ার সময় মা মারা গেছে। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা মারা যাবার পরে মানসিক অবসাদে বন্ধ হতে চলেছিল পড়াশোনা। সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে এবার মাধ্যমিকে ৬৫৩ নম্বর পেয়ে বিদ্যালয়ে সেরা হয়ে সকলের নজর করল গঙ্গারামপুর শহরের (Gangarampur) কাদিহাট বেলবাড়ি হাইস্কুলের ছাত্র শিবা রায়। শিবা পরবর্তীতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে চায়। শিবার পরবর্তী পড়াশোনায় সব ধরনের সহযোগিতা করতে চান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডঃ পার্থ সরকার।
শিবা রায় এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলায় পেয়েছে ৯২ নম্বর, ইংরেজিতে ৮১ নম্বর, অঙ্কে ৯৪ নম্বর, ভৌতবিজ্ঞানে ৯২ নম্বর, জীবনবিজ্ঞান, ইতিহাস ও ভূগোলে পেয়েছে ৯৮ নম্বর করে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে টিউশনের ওপরে নির্ভরতা কম ছিল শিবার। মূলত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপরেই ভরসা করেছিল শিবা। টেস্ট পরীক্ষার পরেও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে পেয়েছিল বিশেষ কোচিং। পেয়েছে বন্ধুদেরও সাহায্য। দিনে মোট ৭-৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করতো শিবা। শিবা রায়ের বাড়ি গঙ্গারামপুরের বেলবাড়ি(১) পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীতলা এলাকায়। বাবা রাজমিস্ত্রি।
এত প্রতিকূলতার মধ্যে বিদ্যালয়ের সেরা ৬৫৩ নম্বর পেয়ে শিবা রায় জানান, ‘আমার এই রেজাল্টে আমি খুব একটা খুশি নই। টেস্ট পরীক্ষায় এর চাইতে অনেক বেশি নম্বর পেয়েছিলাম। তাই আরও বেশি নম্বর পাব, এই প্রত্যাশা করেছিলাম। তবে এই ফলাফল আমি মেনে নিয়েছি। ভবিষ্যতে আমি আরও ভালো রেজাল্ট করতে চাই। আমার এই সাফল্যের পেছনে আমার পরিবারের মানুষজন এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অবদান ভোলার নয়। এছাড়া বন্ধুরাও অনেক সাহায্য করেছে। আমি প্রত্যেকদিন ৭ – ৮ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করেছি। আগামীদিনে আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে চাই।’
ছেলের সাফল্যে শিবা রায়ের বাবা চন্দন রায় জানান, ‘আমার ছেলে মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করেছে। তবে টেস্ট পরীক্ষাতে এর চাইতেও বেশি পেয়েছিল। তাই আরও বেশি পাবে এই প্রত্যাশা ছিল। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ওর মা মারা যাওয়াতে ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। এক মাস ও পড়াশোনা করতে পারেনি। এর মধ্যেও ও যে রেজাল্ট করেছে তাতে আমি গর্বিত।’
ছাত্র শিবা রায়ের সাফল্যে কাদিহাট বেলবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ডঃ পার্থ সরকার জানান, ‘শিবা রায়ের মাধ্যমিকের ফলাফলে আমি সহ বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক- শিক্ষিকারা ভীষণ আনন্দিত। শিবা রায় খুবই সাধারণ পরিবারের ছেলে। ওর বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় সেইভাবে টিউশন পড়তে পারেনি। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওকে সবভাবে সাহায্য করেছে। তার মধ্যেও ৬৫৩ নম্বর পেয়েছে সেটা আমাদের কাছে অনেক।’