গঙ্গারামপুর: মধ্যযুগীয় বর্বরতার চিত্র ধরা পড়ল গঙ্গারামপুরে (Gangarampur)। ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক দম্পতি সহ তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাপক মারধোর করলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। এমনকি জলে মল-মূত্র গুলিয়ে খাওয়ানোর মত চরম অমানবিক কাজও করা হল তাদের সঙ্গে। গোটা ঘটনায় স্বত:প্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি গ্রেফতা করা হয়েছে ৬ জনকে।
গঙ্গারামপুর ব্লকের বাসুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভাদ্রা এলাকায় আক্রান্ত দম্পতি ও তার ছেলে বৌমা নিয়ে তাদের পরিবার। গত এক বছর আগে এই পরিবারের পঞ্চাশোর্ধ গৃহবধূ ও তার স্বামীকে ডাইনি বলে অপবাদ দেন গ্রামবাসীদের একাংশ। সম্প্রতি গ্রামে অসুস্থতাজনিত কারনে পরপর তিনজনের ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরপর ওই দম্পতিকে পুনরায় ডাইনি বলে ঘোষণা করেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
গত বৃহস্পতিবার রাত প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ গ্রামবাসীদের একাংশ আক্রান্ত দম্পতিদের বাড়িতে আসেন। ডাইনি অপবাদ দিয়ে তাদের বেঁধে রেখে ব্যাপক মারধর করা হয়। এমনকি গৃহবধূকে মারতে মারতে স্থানীয় মন্দিরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ। আক্রান্তদের উদ্ধার করতে গেলে কর্তব্যরত পুলিশকে বাধা সহ হেনস্থা করা হয়। এরপর পুনরায় গঙ্গারামপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী (Police) ঘটনাস্থালে পৌঁছায়। অবশেষে স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্পের জওয়ানদের সহযোগিতায় আক্রান্তদের উদ্ধার করা হয় এবং তিনজন আক্রান্তকে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে (Hospital) ভর্তি করা হয়। বর্তমানে আশঙ্কাজনভাবে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আক্রান্ত গৃহবধূ।
এবিষয়ে আক্রান্ত গৃহবধূর ছেলে ও খোদ আক্রান্ত জানান, ‘গত এক বছর ধরে আমার মা এবং বাবাকে ডাইনি হিসেবে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শ্মশানকালী পুজো ছিল। সেখানে আমাদের যেতে বলেছিল ।আমরা বিপদ হতে পারে ভেবে যাইনি। এরপর রাতেরবেলা গ্রামবাসীদের একাংশ বাড়িতে এসে আমাদের ব্যাপক মারধর করে। পুলিশি সহায়তায় আমাদের প্রাণ বেঁচেছে। আমরা এই নারকীয় ঘটনার বিচার চাই।’ এই ঘটনায় প্রেক্ষিতে স্বত:প্রণোদিত মামলার রুজু করে ৬ জন গ্রামবাসীকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ। এদিন তাদের গঙ্গারামপুর আদালতের পেশ করা হয়।
এ বিষয়ে মহাকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘এটা অত্যন্ত নোংরা ঘটনা। এই ধরনের জঘন্য ঘটনার ক্ষেত্রে কাউকে বিন্দুমাত্র রেয়াত করা হবে না। কঠোর হাতে এসবের মোকাবিলা করা হবে।’
এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের গঙ্গারামপুর বিজ্ঞান কেন্দ্রর সম্পাদক ড. অমিত ঘোষ জানান, ‘সম্প্রতি এই ধরনের ঘটনা পতিরাম ও বালুরঘাটে ঘটেছে। মূলত যে সমস্ত পরিবার বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করেন বা একা বাস করেন, তাদেরকে লক্ষ্য করে এবং তাদের সম্পত্তি হাতানোর জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। আবার অনেক সময় কোনও পরিবারের সদস্যদের মানসিক সমস্যা থাকলে সেটাকে কেন্দ্র করে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়।কুসংস্কারের জন্য একঘরে করে দেওয়া হয়। যেসব পরিবারের উপরে এসব ঘটানো হয়, তারা মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হন। এনিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা আগামী দিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসচেতন বৃদ্ধি করতে কাজ করব।’