দার্জিলিং: এ যেন বাস্তবের ‘জুরাসিক পার্ক’। স্টিভেন স্পিলবার্গের সেই যুগান্তকারী সিনেমাই যেন নেমে এসেছে দার্জিলিংয়ের মাটিতে। বন্যপ্রাণ হিমালয়ের সম্পদ। এই বিস্তীর্ণ এলাকার বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণের বহু প্রজাতিই যদিও এখন অস্তিত্বের সংকটে। এক্ষেত্রে বিপন্ন বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণে এগিয়ে এসেছে দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিকাল পার্ক বা দার্জিলিং চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। দার্জিলিং চিড়িয়াখানা ভারতের প্রথম ‘ফ্রোজেন জু’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সময়ের স্রোতে দার্জিলিংয়ের বন্যপ্রাণ যাতে চিরতরে হারিয়ে না যায় তাই তার ডিএনএ সংরক্ষিত করে রাখার কাজ শুরু করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এখানে বিশেষ পরীক্ষাগারে হিমালয়ের বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ডিএনএ মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেন ভর্তি ইস্পাতের ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি। পশ্চিমবঙ্গের চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় জানিয়েছেন, এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার উদ্দেশ্যই হল বন্যপ্রাণের প্রজাতিগুলি হ্রাস পেলেও যাতে তাদের জেনেটিক ব্লুপ্রিন্ট অক্ষত থাকে তা নিশ্চিত করা।।
বিশ্বজুড়ে ‘ফ্রোজেন জু’ পদ্ধতি জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় ‘বায়ো ব্যাংকিং’-এর কাজ শুরু হয়৷ পরে জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকিং সূচনা করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ৷ এই ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রাণীর জেনেটিক সামগ্রী সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করা হয়৷ রেড পান্ডা, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, স্নো লেপার্ড–সহ নানা প্রাণীর গ্যামেট ও ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ৯টি প্রজাতির প্রায় ২০ টি নমুনা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে এখানে৷ এই নমুনা দিয়েই জীবজগতে প্রাণীদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাণীদের মিউটেশনের কারণ ও প্রভাব, জীব বৈচিত্র্য-সহ একাধিক বিষয়ে গবেষণা করা যাবে৷ ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত এই নমুনা সংরক্ষণ করা সম্ভবপর বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এটা বলাই যায়, এই নমুনা সংরক্ষণের ফলে রেড পান্ডা বা তুষার চিতার মত বিপন্ন প্রজাতিগুলি চিরকালের মতো হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর বাসবরাজ হোলিয়াচি বলেন, ‘প্রশিক্ষিত পেশাদাররা এই কাজটি করছেন সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।’ তিনি জানান, এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা দুটি স্তরে কাজ করে। মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জেনেটিক নমুনা ও ডিএনএ সংরক্ষণ করা হয়, এর পাশাপাশি জৈব ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টিস্যুগুলিকে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে রাখা হয়। চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় বলেন, ‘এটা ডিএনএ সংরক্ষণ করার একটা প্রচেষ্টা ৷ যদি কোনও পশু স্বাভাবিকভাবে মারা যায় বা তার অকালমৃত্যু ঘটে, তাহলে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলিকে এভাবে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’