উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ফ্যাটি লিভার (Fatty Liver) মহিলাদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ। প্রধানত জীবনধারা, ডায়েট এবং কিছু হরমোনজনিত কারণে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ে। ফ্যাটি লিভার তখনই হয় যখন লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে প্রদাহ, ক্ষত এমনকি লিভার ফেলিওর-ও হতে পারে। মেনোপজের পরে বা যাঁদের পিসিওএসের সমস্যা রয়েছে তাঁদের ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেশি। সেক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ বা কারণ জেনে রাখুুন, যাতে রোগটি শনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ
পেটে অস্বস্তি বা পেট ভরা মনে হয় – যেসব মহিলার ফ্যাটি লিভার রয়েছে তাঁরা পেটের ওপরে ডানদিকে মৃদু ব্যথা বোধ করেন বা চাপ অনুভব করেন। এই ধরনের অস্বস্তি সাময়িক হতে পারে। ফলে প্রায়ই অনেকে একে বদহজমের সমস্যা ভেবে ভুল করেন।
অস্বাভাবিক ক্লান্তি – বারবার দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি একটি সূক্ষ্ম লক্ষণও বটে। কারণ, ফ্যাটি লিভার এনার্জি মেটাবলিজমে প্রভাব ফেলে। ফলে মহিলারা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ক্লান্ত বোধ করেন।
ওবিসিটি বা অতিরিক্ত ওজন – অতিরিক্ত ওজন বিশেষ করে পেটের চর্বি ফ্যাটি লিভারের একটি প্রধান কারণ। পেটের চারদিকে জমে থাকা চর্বি লিভারে বর্ধিত চর্বি জমার সঙ্গে সংযু্ক্ত।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা টাইপ–২ ডায়াবিটিস – ডায়াবিটিস বা প্রি-ডায়াবিটিসে আক্রান্ত মহিলারা প্রায়শই ইনসুলিন কার্যকারিতা নষ্টের কারণে ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভোগেন। এই অবস্থার জন্য লিভারের কোষে সহজেই ফ্যাট জমতে পারে।
উচ্চ কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইড – রক্তে লিপিডের মাত্রা অস্বাভাবিক হলে লিভারে ফ্যাট জমতে পারে। অনেক মহিলা জানেনই না, তাঁদের উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েেছ, যা সময়ের সঙ্গে লিভার আরও খারাপ করে।
হরমোনে পরিবর্তন – মেনোপজ বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস)-এর সময় হরমোনে পরিবর্তন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা শরীরে ফ্যাট বাড়াতে পারে। ফলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁিক বাড়ে।
দ্রুত ওজন কমে যাওয়া বা ক্র্যাশ ডায়েট – দ্রুত ওজন কমানো লিভারে চাপ ফেলতে পারে এবং চর্বি জমার প্রবণতা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে যে মহিলারা কড়া ডায়েটে থাকেন তাঁদের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হতে পারে।
মদ্যপান – পরিমিত মদ্যপানও কিছু মহিলার ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারের কারণ হতে পারে। যদিও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি) বেশি দেখা যায়, তবে অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভারেরও ক্ষতি হতে পারে।
ত্বকে কালো দাগ – এই ধরনের দাগ যা প্রায়ই ঘাড় বা বগলে দেখা যায়, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের দৃশ্যমান ইঙ্গিত হতে পারে, যা ফ্যাটি লিভােরর একটি কারণ।
রক্ত পরীক্ষায় লিভার এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধি – বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্তপরীক্ষার সময় এএলটি বা এএসটি-র মতো লিভার এনজাইমগুলির মাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি ধরা পড়ে। যদিও এটা কোনও লক্ষণ নয় যে আপনি অনুভব করবেন, কিন্তু একে লাল সতর্কতা বলতে পারেন যাতে বোঝা যায় আপনার লিভার বেশ চাপে রয়েছে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং মদ্যপান এড়িয়ে চললে ফ্যাটি লিভার সমস্যার সমাধান হতে পাের। মহিলাদেরও উচিত হরমোন এবং রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা, বিশেষ করে মেনোপজের সময়ে এবং পরে। সর্বোপরি সুস্থ নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে পারে।