তুফানগঞ্জে বাণী সংঘের দুর্গাপুজো বরাবরই শহরের অন্যতম আকর্ষণ। এ বছর ৩৫ লক্ষ টাকার বাজেটে থিমের পুজো হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিমাও হচ্ছে নজরকাড়া। ১৬ ফুট উচ্চতার প্রতিমা গড়ছেন কাকরিবাড়ির খ্যাতনামা মৃৎশিল্পী নকুলচন্দ্র পাল, প্রস্তুতি দেখে আলোকপাত করলেন বাবাই দাস।
তুফানগঞ্জ: ব্যস্ত রাস্তায় মণ্ডপে ঢুকলে প্রথমেই কানে আসবে ঢেঁকির শব্দ। নাকে আসবে নতুন চালের ঘ্রাণ। চোখে পড়বে ধানের গোলা, ধামা, কুলো। ঠিক এভাবেই বাঁশ, কাশিয়া আর মাটির বাসনের আলাদা জগৎ দাঁড়িয়ে থাকবে পুজোর আবেশের পাশে। এককথায় শহরের বুকে এক টুকরো গ্রামবাংলার আবহ। এবারের পুজোয় (Durga Puja 2025) এমনই এক কৃষিজীবী পরিবারের ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তুফানগঞ্জ লম্বাপাড়া বাণী সংঘ। এবছর ক্লাবের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী। কর্মকর্তাদের কাছে জানা গেল, গত দুই-তিন বছর ধরে যে মণ্ডপ হচ্ছে তার চেয়ে একটু আলাদা কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে এবার। তাই পুজোর থিম ‘মাটির গন্ধে মাতব আনন্দে।’
বৃহস্পতিবার ক্লাব প্রাঙ্গণে ঢুঁ মারতেই দেখা গেল, শিল্পীরা আপনমনে কাজ করছেন। এ বছরে থিমের দায়িত্ব পেয়েছেন কলকাতার শিল্পী অমল পাঁজা। প্রায় ২২ বছর হল, তিনি এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। ব্যস্ততার ফাঁকেই বললেন, ‘শুধু তুফানগঞ্জই নয়, দিনহাটা ও কোচবিহারেও পুজোমণ্ডপের কাজ পেয়েছি। এর মধ্যে বাণী সংঘের থিমটি একটু আলাদা। উপকরণ সবই হবে পরিবেশবান্ধব। যার মধ্যে রয়েছে কাশিয়া, হোগলা পাতা, মাটির বাসন ও ভেষজ রং।’ থিমের কাজ মহালয়ার আগেই শেষ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পুজো কমিটির সভাপতি সুভাষ দত্ত বললেন, ‘গ্রামবাংলার কৃষিজীবী পরিবারে আজও ধুমধাম করে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। ঢেঁকিতে ধান ভেনে চাল, তা থেকে তৈরি হয় নানা খাবার। তবে এখন সময় বদলেছে৷ এসেছে মেশিন, তাতেই হয় ধান থেকে চাল। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামবাংলার সেই ছবিটা তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা আশাবাদী, প্লাস্টিকমুক্ত মণ্ডপের এই চিন্তাভাবনা দর্শনার্থীদের মনে ছাপ রাখবে।’
পুজো কমিটির সম্পাদক রাজীব তালুকদার জানালেন, বাণী সংঘের দুর্গাপুজো বরাবরই শহরের অন্যতম আকর্ষণ। শহর ছাড়াও দূরদূরান্তের মানুষ এসে ভিড় করেন। তাই পুজোর আয়োজনে কোনও খামতি রাখতে চাই না। তাঁর সংযোজন, ‘এ বছরে বাজেট ৩৫ লক্ষ টাকা। থিমের পাশাপাশি প্রতিমা হবে নজরকাড়া। ১৬ ফুট উচ্চতার প্রতিমা গড়ছেন কাকরিবাড়ির খ্যাতনামা মৃৎশিল্পী নকুলচন্দ্র পাল।’ এদিকে আলোকসজ্জার কাজে বরাত পেয়েছেন চন্দননগরের শিল্পী বাপ্পা মান্না। তাঁর কথায়, ‘৫২ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দুটো প্রধান গেট থাকছে। এছাড়াও থাকবে ৩৫ ফুটের দুটি গেট। সবমিলিয়ে থিমের সঙ্গে মানানসই আলোকসজ্জা দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে বলেই আশা উদ্যোক্তাদের।