সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, জটেশ্বর: একেক পুজোর একেক রকম বৈশিষ্ট্য। কোথাও থিমের চমক, কোথাও আলোকসজ্জার। তবে জটেশ্বরের আমরা ক’জন মহিলাবৃন্দ পুজো কমিটির আয়োজনের বিশেষত্ব আবার তাদের চাঁদা তোলায়। পুজোর আগে আগে নয়, এখানে চাঁদা তোলা হয় সারাবছর ধরে। তবে পুজোর (Durga Puja 2025) আয়োজনের জন্য পাড়ার বাইরে আর কারও কাছে হাত পাতা হয় না। প্রতি মাসে এলাকার বাসিন্দারা সাধ্যমতো টাকা জমা করেন পুজোর ফান্ডে। সময় হলে সেই টাকা দিয়েই হয় পুজো।
পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ কাকলি ভদ্র বলছিলেন, ‘আমাদের পুজোর বিশেষত্ব হল একতা। কারও ওপর যাতে চাপ না পড়ে তাই আমরা একবারে চাঁদা না নিয়ে প্রতি মাসে অল্প অল্প করে টাকা নিই। প্রতি মাসে চাঁদার জন্য পুজোর মিটিংয়ের আসল থিম হল প্রাণখোলা আড্ডা।’
পুজো মানে আদতে যে মিলনের উৎসব সেটা জটেশ্বরের এই পুজোর আয়োজন দেখলে বোঝা যায়। মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত এই পুজোয় পাড়ার সকলেই যেন কর্মকর্তা। কমিটির সভাপতি মায়া শীল বলেন, ‘প্রতিমা ভদ্র, সংঘমিত্রা চট্টোপাধ্যায়, রেখা ঘোষদস্তিদার এবং পড়ার অন্যরা মিলে ২০১৪-র শুরুর দিকে ঠিক করি নিজেদের পুজো শুরু করব।’ একটু থেমে মায়া যোগ করেন, ‘তখন আর্থিক ক্ষমতা খুবই কম ছিল। কিন্তু তাও ঠিক করেছিলাম অন্য কোথাও থেকে চাঁদা না নিয়ে নিজেদের পাড়ার লোকের চাঁদাতেই পুজো হবে। সবাই সবার আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দেবেন, কোনও চাপ ছাড়া। আসল উদ্দেশ্য সবাই মিলে একসঙ্গে পুজোর ক’দিন আনন্দ করা।’ অন্যতম উদ্যোক্তা সংঘমিত্রা চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘প্রতিমা আনা, ভোগ রান্না এবং বিসর্জন অবধি সবটা পাড়ার সবাই মিলে করি।’ উদ্যোক্তারা জানালেন, এই পুজোর একটা অলিখিত নিয়ম আছে। যদি পাড়ার কারও বাড়ির ছেলে বা মেয়ের চাকরি হয়, মায়ের প্রতিমার খরচ সেই বাড়ি থেকে আসে। মহিলারা যদি পুজোর কাজে ব্যস্ত থাকেন, তবে এই সময়ে তাঁদের সংসার সামলান কারা? পুজো কমিটির সম্পাদক শুক্লাব্রহ্ম ঘোষ বলেন, ‘যেহেতু সকাল থেকে রাত অবধি পুজোমণ্ডপেই কেটে যায় তাই পুজোর ক’দিন সংসারের বেশিরভাগ কাজ বাড়ির বাকিরা ভাগাভাগি করে নেয়।’
যাঁরা পুজো শুরু করেছিলেন আস্তে আস্তে তাঁদের সকলের বয়স বাড়ছে। তাই দায়িত্ব ভাগ করে নিতে এগিয়ে এসেছে তরুণ প্রজন্ম। এই পাড়ায় বিয়ে হয়ে আসা অনিন্দিতা দে সরকার, অন্বেষা শীল, সংগীতা রায়রা আস্তে আস্তে পুজোর দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন। অনিন্দিতা বলেন, ‘আগে পুজোর সময় বাপের বাড়ি যেতাম। কিন্তু এখন এই পুজো ছেড়ে কোথাও যেতেই ইচ্ছে করে না।’