সানি সরকার, শিলিগুড়ি: ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ই নাকি আগামীর গন্তব্য! বছর আটেক আগে যে জায়গার অধিকার নিয়ে ভারত-চিন বিবাদে জড়িয়েছিল, এখন সেই ডোকালাম (Doklam) সেজে উঠছে পর্যটকদের জন্য।
পুজোর মুখে এই ‘যুদ্ধক্ষেত্র’-তে পর্যটকদের প্রবেশে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিকিম প্রশাসন (Sikkim Administration)। বিদেশমন্ত্রক সবুজ সংকেত দেওয়ায় দ্রুত পরিকাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাহাড়ি রাজ্যটির পর্যটন দপ্তর। ফলে নাথু লা, চো লা’র পর আরও একটি ‘সংঘাত ভূমি’ হয়ে উঠছে পর্যটনস্থল। সিকিম পর্যটন দপ্তরের প্রধান সচিব সি সুভাকর রাও বলছেন, ‘ডোকালামে পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাস থেকেই পর্যটকদের ছাড়পত্র দেওয়া শুরু হবে।’
কিন্তু বরফ গলল কীভাবে? এর পিছনে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রির হাত দেখছে কূটনৈতিক মহল। কৈলাস মান সরোবর যাত্রার পাশাপাশি ডোকালামে পর্যটনে ছাড়পত্র দিতে চিনকে তিনিই রাজি করিয়েছেন, মনে করছেন কূটনীতিবিদরা।
শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে নয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ শাসনের সামরিক ক্ষমতা কেমন ছিল, তা পরখ করতে অনেকেই ছুটে আসেন দার্জিলিংয়ের তাকদায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গেও নাম জড়িয়ে রয়েছে তাকদার। ফলে এই অঞ্চল এখন অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। ঠিক সেভাবেই আগামীর সম্ভাবনাময় পর্যটনস্থল হয়ে উঠতে পারে ডোকালাম, এমনটাই আশা পর্যটন মহলের।
১৯৬৭ সালে সীমান্তের অধিকার নিয়ে ভারত-চিন মুখোমুখি হয়েছিল নাথু লা এবং চো লা’য়। সংঘাতে জড়িয়েছিল ভারতীয় সেনা ও চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। ওই দুটি জায়গাই এখন পর্যটনকেন্দ্র। এবার পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে ভারত-ভুটান-চিন, ত্রি-সংযোগস্থলে অবস্থিত ডোকালাম। সীমান্তের এই এলাকাকে পর্যটন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভারত রণভূমি দর্শন’।
বিশিষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ী রাজ বসু মনে করছেন, ‘সীমান্তগুলিকে যত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, ততই দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। যে কারণেই বর্ডার ট্যুরিজমে জোর দেওয়ার কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি।’
বিতর্ক, বিবাদ অবশ্য পিছনে ফিরে দেখতে চাইছে না সিকিম। বিদেশমন্ত্রক থেকে সবুজ সংকেত পেতেই ডোকালাম নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে প্রেম সিং তামাংয়ের প্রশাসন। ‘এবার পুজোয় ডেস্টিনেশন হোক ডোকালাম’, সিকিম পর্যটনে নতুন ক্যাচলাইন তৈরি করে ফেলা হয়েছে।
সিকিম প্রশাসন সূত্রে খবর, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩,৭৮০ ফুট উচ্চতায় মালভূমি ডোকালামের জন্য নতুন রাস্তা তৈরি, গাড়ি রাখার জায়গা তৈরির কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। গ্যাংটক থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরের নাথু লা’তে যখন ছুটছেন পর্যটকরা, তখন ৬৮ কিলোমিটার দূরের ডোকালামে তাঁরা পা রাখবেন, দৃঢ় বিশ্বাসী সিকিমের পর্যটন দপ্তর। উচ্চতাজনিত কারণে যাতে শারীরিক সমস্যায় না পড়তে হয় পর্যটকদের, তার জন্য ডোকালামে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সেনার সাহায্য নেওয়া হবে।
প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কথা পৌঁছে গিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে। সিকিমের পর্যটন ব্যবসায়ী সোনম ভুটিয়া বলছেন, ‘প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ২৫টি গাড়ির পারমিট দেওয়া হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলবে।’
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘যত বেশি ডেস্টিনেশন বাড়বে, ততই নতুন পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। উপকৃত হবে স্থানীয় এলাকা। চাঙ্গা হবে অর্থনীতিও।’