সানি সরকার, শিলিগুড়ি: খাড়া পথ, বড় বড় বোল্ডার ছড়িয়ে ইতিউতি। যেখানে পা রাখাটাই ঝুঁকির, সেখানে গড়াচ্ছে গাড়ির চাকা। মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফুতে গিয়ে যখন গাড়ি থমকাল, তখন সামনে দিগন্ত বিস্তৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা। ৭০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও বার্ধক্যের লেশমাত্র নেই। বরং তারুণ্যের তেজেই ছুটছে গাড়ি। আসলে ল্যান্ডরোভার এবং দার্জিলিং (Darjeeling) অনেক বছর ধরেই সমার্থক। সেই ল্যান্ডরোভার নিয়েই এবার তথ্যচিত্র (Documentary) তৈরি করেছেন কলকাতার (Kolkata) শীলভদ্র দত্ত। তাঁর তৈরি ‘ল্যান্ডরোভার ফ্যামিলি’ এবছর সাউথ এশিয়ান শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে জায়গা করে নিয়েছে। নন্দনে আগামী ৭-১৩ জুলাইয়ের মধ্যে ছবিটি প্রদর্শিত হবে। পাশাপাশি ছবিটি দেখানো হবে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের ধ্রুমা ফিল্ম ফেস্টিভালেও।
শীলভদ্রর গলায় একরাশ আবেগ আর ভালোবাসা। বলছেন, ‘সান্দাকফু, মানেভঞ্জন আমার কাছে খুব প্রিয়। কতবার গিয়েছি মনে করতে পারছি না। আর ল্যান্ডরোভারও ঠিক ততটাই প্রিয়। কত যে স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই গাড়ির সঙ্গে বলে শেষ করতে পারব না।’ তাঁর তৈরি এই তথ্যচিত্রে অঞ্জন দত্তরও যে একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, তা-ও জানিয়েছেন তিনি।
বিদেশের মাটিতে ল্যান্ডরোভার আভিজাত্যের প্রতীক হলেও, দার্জিলিংয়ে কিন্তু গাড়িটির আগমন ঘটেছিল মূলত পণ্য পরিবহণের জন্য। ভারত-নেপাল সীমান্তের মধ্যবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ রুটটি প্রধান বাণিজ্য রুটের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঘোড়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে ১৯৫০ সাল বা তার আশপাশে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছিল ল্যান্ডরোভার। মানুষ এবং পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ল্যান্ডরোভার হয়ে উঠেছিল একমাত্র ভরসা। কৌলীন্য ধরে রাখলেও আজ ল্যান্ডরোভারের সংখ্যা হাতেগোনা। কীভাবে দার্জিলিংয়ে পা রাখল ল্যান্ডরোভার, গাড়িটির বৈশিষ্ট্যই বা কী, সমস্ত কিছুই শীলভদ্র তুলে ধরেছেন ‘ল্যান্ডরোভার ফ্যামিলি’তে। ৪০ মিনিটের তথ্যচিত্রে ধরা পড়েছে ল্যান্ডরোভার এবং গাড়িটিকে ঘিরে পাহাড়ি মানুষের আবেগ, ভালোবাসা, সমস্ত কিছুই।
ল্যান্ডরোভার-এর সঙ্গে তাঁর ছবির নামকরণে ফ্যামিলি শব্দটি জুড়ে গেল কেন? ভালোবাসার কথা তুলে ধরলেন শীলভদ্র। বললেন, ‘যে হাল চাষ করেন, তাঁর কাছে বলদ দুটি পরিবারের সদস্য হয়ে যায়। অনেক পরিবারের কাছে বাড়ির গাড়িটিও পারিবারিক সদস্য, ভালোবাসার টানে।’ ছোটবেলায় নিজের জন্মদিনেও কারও কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন ল্যান্ডরোভারের একটি মডেল। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা শীলভদ্রর। এর আগে হার্টের সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুদের নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন পরিচালক। কাজ করছেন সাঁওতালদের বিশেষ একটি নাচ নিয়ে।