অমৃতা দে, দিনহাটা: ভারতীয় ভূখণ্ডে থেকেও যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো বাস করেন গ্রামবাসীরা। রাস্তাঘাট, উপযুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ কিছুই নেই গ্রামটিতে। আজকের দিনে এমনটা ভাবাই যায় না। কিন্তু এমনই করুণ হাল দিনহাটার-১ (Dinhata) ব্লকের পেটলা গ্রাম পঞ্চায়েতের জামাদারবস এলাকার ছাট বারোবাংলা গ্রামের হাজারেরও বেশি বাসিন্দার।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, উন্নয়নের ছোঁয়া এই গ্রামে এসে পৌঁছায়নি। অথচ এই গ্রামেই ভোটের সময় দেখা যায় নেতা-মন্ত্রীদের। ভোটপর্ব মিটতেই আর কারও দেখা মেলে না। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই এলাকায় প্রচারে এসেছিলেন কোচবিহারের সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। শুধু তাই নয়, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী উদয়ন গুহের হাতের নাগালেই ছাট বারোবাংলা। উন্নয়নের কাছেপিঠে থেকেও কেন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগল না এই গ্রামে এনিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
স্থানীয় বাসিন্দা নগেন রায়ের অভিযোগ, ‘ভোটের সময় নেতা-মন্ত্রীরা এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু ভোটের পর প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন না কেউ। আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো বাস করছি।’
যদিও পেটলা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শিল্পী ব্যাধ রায় বলেন, ‘গ্রামের সমস্যাগুলি ওপরমহলকে জানিয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই গ্রামের অবস্থা বদলাবে।’
বুধবার গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেল রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। কার্যত রাস্তাঘাট নেই বললে চলে। বাড়ির ভেতর দিয়ে রাস্তা কেটে কেটে গ্রামে প্রবেশ করতে হয়। এ যেন গ্রাম নয়, ভুলভুলাইয়া। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি নেই পানীয় জলের ব্যবস্থাও। গ্রামের মানুষ টিউবওয়েলের জল পান করেন প্রতিনিয়ত। রাতে তো গ্রামে চলাফেরা করাই দায়। গ্রামের ভেতরে নেই কোনও আলোর ব্যবস্থা। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন মানুষ। ভাবা যায়, আজকের ডিজিটাল ভারতকে যেন সপাটে চড় মারে এই গ্রামের করুণ দশা।
স্থানীয় বাসিন্দা কাকলি রায়ের কথায়, ‘আমরা চিন্তায় থাকি রাতবিরেতে যেন কেউ অসুস্থ হয়ে না পড়ে। রাস্তার যা হাল তাতে হাসপাতালে পৌঁছানো মুশকিল। এদিকে, অ্যাম্বুল্যান্স গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করতে চায় না।’
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে গ্রামের সার্বিক উন্নতিতে বেশ কিছু প্রকল্প তৈরি হয়েছে পেটলার অন্য গ্রামে। অথচ ছাট বারোবাংলা গ্রাম কেন বিচ্ছিন্ন? এর কোনও সদুত্তর মেলেনি জনপ্রতিনিধিদের কাছে। এলাকাটি কার্যত সিঙ্গিমারি নদীতীরবর্তী এলাকা। নদীভাঙনের জেরে গ্রামবাসীরা ভিটেমাটি ছেড়ে গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করছেন। ভিটেমাটি ছেড়ে গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করলেও গ্রামের ভেতরে উন্নতি না থাকায় কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য দীনবন্ধু রায় বলেন, ‘এর আগে পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল গ্রামের। বর্তমানে কিছুটা রাস্তাঘাট ঠিক করা হয়েছে। আশা করছি পরবর্তীতে আরও ভালো কাজ হবে এখানে।’