উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: শুক্রবার রথযাত্রা। এবার পুরী বা মাহেশের চিরাচরিত রথযাত্রার পাশাপাশি সকলের নজর রয়েছে দিঘার রথযাত্রার দিকেও। দিঘায় জগন্নাথদেবের মন্দির উদ্বোধনের পর প্রথম বার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে রথযাত্রা উৎসব। জানা গেছে, আজ বুধবারই মুখ্যমন্ত্রীর দিঘা পৌঁছে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে থেকেই সবটা তদারকি করতে চান তিনি।
প্রশাসনিক প্রস্তুতি
দিঘার রথযাত্রা সফল করতে ইসকনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ইতিমধ্যেই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রসচিব, মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের কর্তারা বৈঠক করেছেন। সমবেত ভক্তরা যাতে সকলে জগন্নাথদেবকে দর্শন করতে পারেন, সেজন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্দির চত্বরে সাজানো হয়েছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার ৩৬ চাকার তিনটি বিশাল রথ। এছাড়াও রথযাত্রা উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে মহোৎসবের। সেখানে দু’লক্ষ ভক্তের সমাগম হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যদিও নিরাপত্তার কারণে সবাইকে রথ টানতে দেওয়া হবে না। তবে সবাই দড়ি ছুঁতে পারবেন। নির্বাচিত ভলান্টিয়ার ও সাধু-সন্তরা কেবলমাত্র দড়ি টানতে পারবেন।
কেমন থাকছে নিরাপত্তা
রথের সময় মন্দির এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে সুষ্ঠুভাবে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ৩০০০ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। মন্দির চত্বরের চার কোণায় বসানো হয়েছে চারটি ওয়াচ টাওয়ার। সেই সঙ্গে পুরো পরিস্থিতির ওপর নজরদারি চালাবে ড্রোন। থাকছে সিসি ক্যামেরাও। এছাড়া কোথাও কোনও সমস্যা রয়েছে কি না তা দেখার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে শুক্রবার মাসির বাড়ি পর্যন্ত তিনটি রথ টানা হয়েছিল বলে জগন্নাথ মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস জানিয়েছেন।
ভক্তদের জন্য
ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে তারকেশ্বর মন্দিরের আদলে মন্দির প্রাঙ্গণে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে প্রবেশ ও বাহিরের আলাদা দু’টি পথ করে দেওয়া হয়েছে।
ভিড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা এড়াতে ওল্ড দিঘায় মাসির বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তায় বেশ কয়েকটি ড্রপ গেট তৈরি করা হয়েছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দর্শনার্থীদের জন্য ২৬ তারিখ মন্দির খুলে দেওয়া হবে। সমস্ত দর্শনার্থীর জন্য অন্নপ্রসাদি থালায় থাকবে ভাত, সবজি, ডাল, চাটনি ও পায়েস।
সেদিনের কর্মসূচি
২৭ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী রথযাত্রার সূচনা করবেন। সোনার ঝাঁটায় পরিষ্কার করবেন রাস্তা। সেই পথে ওল্ড দিঘার পুরোনো জগন্নাথ মন্দির চত্বরে তৈরি মাসির বাড়িতে যাবেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। সেজন্য ইতিমধ্যেই রাস্তাঘাট একেবারে ঝাঁ চকচকে করা হয়েছে। এবিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘রথযাত্রা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উলটোরথের দিন পর্যন্ত দিঘায় সাতদিনের মেলা বসবে। মন্দিরের প্রবেশপথে তৈরি হয়েছে চৈতন্যদ্বারের আঙ্গিকে ফটক।’
হোটেলে বাড়ছে ভিড়
রথের টানে ইতিমধ্যেই দিঘায় উপচে পড়ছে ভিড়। গত এক মাসে প্রায় ৩৫ লক্ষ পর্যটক দিঘায় এসেছেন। হোটেলগুলিকে তাঁদের জায়গা দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে। দিঘার একটি হোটেলের মালিক প্রাণতোষ ঘোড়াইয়ের কথায়, ‘রথযাত্রার কারণে প্রায় এক মাস আগে সমস্ত রুম বুকিং হয়ে গিয়েছে। সব হোটেলে একই অবস্থা।’ এই সুযোগে অনেক হোটেল আবার নিজেদের ভাড়া বহুগুণ বাড়িয়েছে বলে খবর।
পর্যটকদের কথায়
সোমবার সকালে দিঘায় এসেছেন বসিরহাটের বিমল সিংহ। তিনি ২৭ তারিখ দিঘার রথযাত্রা দেখে তারপর ফিরবেন। তাঁর কথায়, ‘প্রথম বছরের রথের দড়ি টানার বাসনা নিয়ে এসেছি।’ বর্ধমানের কাটোয়া থেকে সস্ত্রীক এসেছেন মিহির চক্রবর্তী। তিনি জানান, বিশেষ আগ্রহ নিয়ে জগন্নাথ দর্শনে এসেছেন, সেই সঙ্গে সমুদ্র দেখাও হয়ে যাবে।
লক্ষ্মীলাভ টোটোচালকদের
নিউ দিঘায় সাধারণত চলাচল করে হাজারের বেশি টোটো। রথযাত্রার কারণে পর্যটকদের ভিড়ে কার্যত দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না কেউই। অমর সামন্ত নামে এক টোটোচালকের কথায়, ‘ভোর থেকে রাত পর্যন্ত যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া-আসা করছি। খাওয়া-দাওয়ার সময়টুকুও নেই।’
খুশি ব্যবসায়ীরাও
দিঘায় ১৩ বছর খাবারের দোকান চালাচ্ছেন প্রশান্ত মাইতি। তিনি জানান, জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পর থেকে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। অতীতে এরকম দেখা যায়নি। ব্যবসা খুবই ভালো হচ্ছে।
মাসির বাড়ি যাওয়ার যে এক কিলোমিটার রাস্তা, তার দু’পাশে বেশ কিছু বাতাসা, প্যাঁড়া, নারকেল নাড়ু ইত্যাদির দোকান বসেছে। ফুটপাথের অস্থায়ী প্যাঁড়া বিক্রেতা রমেশ জানা বলেন, ‘জগন্নাথদেবের ভোগে ব্যবহৃত প্যাঁড়ার বিক্রিবাটা ভালোই হচ্ছে। আশা করছি, উলটোরথ পর্যন্ত ২ কুইন্টাল প্যাঁড়া বিক্রি করতে পারব।’