আয়ুষ্মান চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার: ‘জাস্ট জমে গেছে।’ শব্দ মাত্র তিনটি। তবে তাতেই বুক দুরুদুরুটা একেবারে কেটে গিয়েছিল শুভজিতের। কারণ মাঝে কেটে গিয়েছে গোটা একটা দশক। সেই লম্বা সময়ে তো বদলে গিয়েছে কতকিছুই! এক দশক আগে আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) শহরের লেবুবাগানের বাসিন্দা শুভজিৎ সিংহ যেভাবে দৃশ্যগুলোর কথা ভেবেছিলেন, তার সঙ্গে এখনকার অনেক অমিল। তাই নতুন করে ভাবতে হয়েছে। আশঙ্কা একটা ছিলই। তাঁদের নতুন ভাবনা রুপোলি পর্দার ভানুর পছন্দ হবে কি না। ফাইনাল এডিটের দিন সেই আশঙ্কার মেঘটাই এক ফুঁয়ে উড়ে গিয়েছিল মেগাস্টার দেবের ওই মন্তব্যে।
জনপ্রিয়তার নিরিখে ‘ধূমকেতু’ (Dhumketu) যে জাস্ট জমে গিয়েছে, তা কারও অজানা নয়। তবে সেই সিনেমার যে একটা আলিপুরদুয়ার-কানেকশন রয়েছে, সেকথা আর কজন জানতেন? এই সিনেমায় এডিটরের কাজ করেছেন শুভজিৎ। তাও আবার একবার নয়, দু’-দু’বার। দু’বার কেন? কারণ, ১০ বছর আগে একবার ধূমকেতুর এডিটিং করা হয়েছিল। কিন্তু তখন সেই সিনেমা রিলিজ হয়নি। যখন শেষপর্যন্ত তা মুক্তির সিদ্ধান্ত হয়, ততদিনে তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ছবি দেখার মানসিকতাও পালটেছে। তাই শুভজিৎ আবার এডিট করেন। যেন হলে বসে কারও ‘পুরোনো সিনেমা দেখছি’ বলে মনে না হয়। সঙ্গে অডিওগ্রাফি, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও পালটানো হয়। আর শুভজিতের পরামর্শেই নাকি অনুপম রায়ের লেখা ও কম্পোজিশনে তৈরি নতুন একটি গান যুক্ত করা হয়। ধূমকেতুর সঙ্গে যেমন, তেমনই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গেও শুভজিতের সম্পর্ক অনেকদিনের। কৌশিকের ছোটদের ছবি, অপুর পাঁচালির মতো সিনেমায় বোধাদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এডিটিংয়ে সহকারীর কাজ করেছেন। সর্বপ্রথম একক এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন সিনেমাওয়ালা সিনেমায়। কাজ করেছেন ৭টি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা নগরকীর্তনে। ডাকঘরের মতো ওয়েবসিরিজে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বাংলাদেশের একাধিক জনপ্রিয় সিনেমাতেও। ম্যাক উইলিয়াম হাইস্কুলের এই প্রাক্তনী কলেজের পড়াশোনা শেষে কলকাতার রূপকলা কেন্দ্রে ডিপ্লোমা ইন সিনেমা নিয়ে স্নাতকোত্তর হন। হিন্দি ও ইংরেজি সিনেমায় এডিটর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। আমির খান প্রোডাকশনের সিনেমাতেও এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। এই মাসেই মুক্তি পাওয়ার কথা সোহম চক্রবর্তীর বহুরূপ এবং স্বরলক্ষ হোম। ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পাবে কাকাবাবুর অভিযান নিয়ে সিনেমা বিজয়নগরের হিরে। সবক’টিতেই কাজ করেছেন শুভজিৎ।
ধূমকেতুর সাফল্যে আপ্লুত হলেও এখন আর তা নিয়ে খুব বেশি গা ভাসানোর সময় নেই আলিপুরদুয়ারের এই নক্ষত্রের। কেবল বলছেন, ‘একটা চ্যালেঞ্জ তো ছিলই। দর্শকদের ভালো লাগছে, এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।’