জয়গাঁ: কাগজে-কলমে মৃত, অথচ বাস্তবে জীবিত, এমন ঘটনার কথা আগেও শোনা গিয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে তো একটি হিন্দি সিনেমাও হয়েছে। কিন্তু কাগজে-কলমে খোলা, অথচ বাস্তবে বন্ধ বাগানের কথা শোনা গিয়েছে কি আগে কখনও? জসপার টেটের মতো বন্ধ দলসিংপাড়া চা বাগানের (Dalsingpara Tea Backyard) শ্রমিকরা অবশ্য এতকিছু জানতেও চান না। তাঁরা পেটে ভাত চান।
দলসিংপাড়া গুদরিবাজার লাইন ধরে হেঁটে গেলেই দেখা মিলবে সেই চা বাগানের ফ্যাক্টরির। আড়াই বছর হতে চলল সকালে ফ্যাক্টরির সাইরেন আর শুনতে পান না শ্রমিক সহ এলাকার বাসিন্দারা। ফ্যাক্টরি গেটে ঝুলছে তালা। জং ধরেছে সেই তালাতে। একটু উঁকিঝুঁকি দিলে দেখা যায় ফ্যাক্টরির জরাজীর্ণ চেহারা। বড় বড় আগাছায় ঢেকেছে ফ্যাক্টরি। শ্রমিকরা বলছেন বাগান বন্ধ। কিন্তু শ্রম দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসেই দলসিংপাড়া চা বাগান খুলে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার জেলার শ্রম দপ্তরের ডেপুটি লেবার কমিশনার গোপাল বিশ্বাস বলেছেন, ‘এই বাগানটি চালু রয়েছে বলে আমাদের কাছে নথি রয়েছে।’
অর্থাৎ, বাগানটি কাগজে-কলমে ‘জীবিত’। কিন্তু বাগানের শ্রমিকরা কী বলছেন? শ্রম দপ্তরের বাগান খুলে যাওয়ার দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন চা বাগানের তৃণমূল ও বিজেপি দুই ইউনিয়নের নেতারাই। তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক মহম্মদ সাজু বলেন, ‘শ্রম দপ্তর কীভাবে বলছে বাগান খোলা? বাগান বন্ধ ছিল বলে ফাওলইয়ের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন বাগানের অধিকাংশ শ্রমিক। সেই ফাওলইও এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শীঘ্র তা চালু না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হব।’ আর বাগানের বিজেপি নেতা জয়বাহাদুর রাই বলেন, ‘বাগান তো বন্ধই। শ্রমিকরাও কর্মহীন।’
গত ২০২৩ সালে দুর্গাপুজোর (Durga Puja) বোনাস নিয়ে শ্রমিক-মালিক বচসার জেরে বন্ধ হয়ে যায় দলসিংপাড়া চা বাগান। আড়াই বছরের বেশি সময় হয়ে গেল বাগান বন্ধই। এতদিন তো সেই বাগানে ফাওলই দিচ্ছিল প্রশাসন। গত মাস পাঁচেক ধরে সেটাও বন্ধ। বন্ধ তো হবেই, কারণ নথিতে তো বাগান খোলাই! এব্যাপারে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশ এসেছে ফাওলই বন্ধ করার, তাই করা হয়েছে।’
শ্রম দপ্তরের দাবি মানতে নারাজ বাগানের শ্রমিক থেকে শুরু করে শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরাও। তাঁদের কথায়, বাগানের কারখানায় তালা ঝুলছে। বাগানের চারদিক ছেয়ে গিয়েছে আগাছায়। এমন দৃশ্য দেখে কে বলবে বাগান খুলেছে? বাগানের শ্রমিক জাসপার টেটে বললেন, ‘বাগান খোলার কোনও নাম নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এদিকে, ফাওলই হিসেবে ১৫০০ টাকা পেতাম। সেটাও বন্ধ। আমাদের কীভাবে চলবে?’
বাগানের আরেক শ্রমিক মিরা গুরুংয়ের মুখেও একই দুর্দশার কাহিনী শোনা গেল। বললেন, ‘ফাওলই মিললে আমাদের সাহায্য হত। সেটাও পাচ্ছি না। আমাদের পরিস্থিতি খুব খারাপ। অনাহারে দিন কাটছে।’
দলসিংপাড়া চা বাগান বন্ধ নাকি খোলা? এই প্রসঙ্গে ডিবিআইটিএ ডুয়ার্স শাখার সচিব শুভাশিস মুখোপাধ্যায় কিন্তু শ্রম দপ্তরের উলটো কথা বলছেন। বললেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে দলসিংপাড়া চা বাগান বন্ধ। এর থেকে বেশি কিছু আমি জানি না।’