পঙ্কজ মহন্ত ও বিশ্বজিৎ প্রামাণিক, বালুরঘাট ও কুমারগঞ্জ: এ যেন হার না মানা এক অদম্য লড়াইয়ের গল্প। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবক নবম শ্রেণিতে পড়া দাদা আদিত্য কোল (Dakshin Dinajpur)। সংসারের সমস্ত কাজ সামলায় তারা নিজেরাই। তাদের বাবা-মা কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে বেঙ্গালুরুতে পরিযায়ী শ্রমিক। নবম শ্রেণির সেই কিশোর আবার থ্যালাসিমিয়ায় আক্রান্ত। প্রতি মাসে নিয়ম করে একাই চলে আসে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। তেমন পরিচিত কেউ না থাকায় রক্তের সন্ধান পেতে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় তাকে। কিন্তু আখেরে সাহসিকতা ও জেদের কাছে হার মানে অসহায়তা। আদিত্যর কথায়, ‘প্রতি মাসেই রক্তের প্রয়োজন হয়। আমি টোটো ভাড়া করে বালুরঘাট ব্লাড সেন্টারে গেলে রক্ত পাই।’
সরকারি ঘর অর্ধেক হয়ে কাজ বন্ধ। ঘরে আলো জ্বলে না। কুমারগঞ্জ ব্লকের বটুন গ্রাম পঞ্চায়েতের সফরপুরে ভাঙাচোরা বাড়িতে যেন আদিত্য তার ১১ বছর বয়সি বোনের অভিভাবক। বাবা-মা তিন বছর আগে শ্রমিকের কাজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। বাড়ি থেকে খাঁপুর উচ্চবিদ্যালয় প্রায় তিন কিলোমিটার। বোনকে নিয়ে রোজ স্কুলে পাড়ি দেয় আদিত্য। পড়াশোনার ফাঁকেই বাড়ির রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা সহ যাবতীয় কাজ দুজনে মিলেই সামলায় তারা। আদিত্যর বাবা অনিল কোল বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে বলেন, ‘ছেলের চিকিৎসার ঋণের কারণেই ভিনরাজ্যে কাজ করতে এসেছি। ঘরের কাজও অসমাপ্ত।’
ভাগ্যের পরিহাসে আদিত্য জন্মলগ্ন থেকেই থ্যালািসমিয়া আক্রান্ত। তবু জীবনযুদ্ধে হার না মানার সংকল্পে এগিয়ে যাচ্ছে সে। প্রতি মাসেই তার রক্তের প্রয়োজন পড়ে। গত সোমবার ঠিক নিয়ম করে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে রক্ত নিতে পৌঁছে গিয়েছিল আদিত্য। বি পজিটিভ রক্তের সন্ধান চলতে থাকে তার। অবশেষে তার পাশে এসে দাঁড়ায় পথের দিশা ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। তাদের তরফে বিএডের ছাত্র রোহিত লাহা আদিত্যকে রক্ত দেন। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে একমাত্র থ্যালািসমিয়া কন্ট্রোল ইউনিট রয়েছে। তাই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থ্যালািসমিয়া রোগীরা রক্ত নিতে হাসপাতালে আসেন। মাঝেমধ্যেই রক্তসংকট তৈরি হলে বেগ পেতে হয় রোগীদের। এর আগে একবার রক্তের অভাবে আদিত্যকে ঘুরেও যেতে হয়েছিল। তবে এখন থেকে প্রতি মাসেই রক্তের প্রয়োজন পড়লে সেই সংস্থা আদিত্যের রক্তের জোগান দেবে বলে জানিয়েছে।
বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের থ্যালািসমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুপ্রিয় বসু বলেন, ‘ওই কিশোর আমাদের নজরে রয়েছে। এর আগে যখন একেবারেই রক্ত মজুত ছিল না তখন সে পায়নি। তবে এক সপ্তাহ পরেই তাকে ডেকে রক্ত দেওয়া হয়েছিল।’
ওর বোন অদিতি বলে, ‘দাদা আর আমি মিলে বাড়ির সব কাজ করি। আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল, মিটার চুরি হয়ে গিয়েছে। এখন বাড়ি বিদ্যুৎহীন।’ প্রতিবেশী প্রতিমা কোল বলেন, ‘ওদের বাবা-মা বাইরে থাকে। আমরা যথাসাধ্য ওদের পাশে থাকি। আদিত্য রক্তের জন্য নিজেই হাসপাতালে যায়।’