বক্সিরহাট: সিনেমা আর বাস্তবের মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, ভুলে গিয়েছিল পাচারকারীরা। ‘পুষ্পা’ সিনেমায় দুধ বহনকারী গাড়ির ভেতরে গোপন চেম্বারে লাল চন্দন কাঠ অনায়াসে পাচার হয়ে যেত। তারা ভেবেছিল, বাস্তবেও সেভাবে পণ্যবাহী লরিতে মদ পাচার হবে। পুলিশি ধরপাকড়ের হাত থেকে বাঁচতে এরকমই ফিল্মি কায়দার সাহায্য নেওয়া হয়েছিল তুফানগঞ্জে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
বৃহস্পতিবার পাচারের পথে বক্সিরহাটের অসম-বাংলা সীমানায় জোড়াই মোড়ে মদবোঝাই লরি আটক করল পুলিশ। ২৮৫ কার্টন মদ সহ পুলিশের জালে গ্রেপ্তার দুই। বাজেয়াপ্ত হওয়া ৫৩ হাজার লিটার মদের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। যা অতীতের সমস্ত অভিযানকে ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি জেলা পুলিশের। সাম্প্রতিক অতীতে জেলা থেকে এত টাকার মদ কখনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কি না, মনে করতে পারছেন না জেলা পুলিশ থেকে আবগারি দপ্তরের আধিকারিকরাও। বক্সিরহাট পুলিশের এই সাফল্যে খুশি জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা।
কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণগোপাল মিনা বলেন, ‘৭০৮০টি মদের বোতল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেগুলো অরুণাচল থেকে বিহারে পাচার করা হচ্ছিল। লরিচালক সতীশ নন্দল এবং খালাসি পবনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চালক হরিয়ানার বাসিন্দা এবং দ্বিতীয়জন দিল্লির বাসিন্দা।’ ধৃতদের শুক্রবার তুফানগঞ্জ মহকুমা দায়রা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সড়ক দিয়ে আসা লরিটিকে বক্সিরহাটের জোড়াই মোড়ের নাকা চেকিং পয়েন্টে দাঁড় করায় বক্সিরহাট থানার পুলিশ। লরিটিকে দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ছিল, লরির ভেতরে একটি বড় যন্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে লরিচালক এবং খালাসি পুলিশকে জানায়, ধান ঝাড়াইয়ের ওই যন্ত্রটি বিহারে নিয়ে যাচ্ছে তারা। সন্দেহ হওয়ায় কাটার দিয়ে লোহার তক্তা কাটতে দেখা যায়, ভেতরে থরে থরে সাজানো রয়েছে বিপুল পরিমাণ মদবোঝাই কার্টন। তার মধ্যে বড় মদের বোতলের ১৫০টি কার্টন, মাঝারি বোতলের ৪৫টি কার্টন এবং ছোট বোতলের ৯০টি কার্টন ছিল।
দিন-দিন মদ, গাঁজা এবং মাদক পাচারের অন্যতম করিডর হয়ে উঠেছে অসম-বাংলা সীমানার এই বক্সিরহাট এলাকা। বাইরের রাজ্যগুলি থেকে আসা পাচার সামগ্রীগুলি বক্সিরহাট হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে অন্যান্য রাজ্যে। আবার উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি থেকেও জিনিস পাচার হচ্ছে এই রাজ্যে। এর আগে সীমান্তে তল্লাশি চালিয়ে কখনও দশ লক্ষ, কখনও ৫০ লক্ষ টাকার মদ একদিনে বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার রাতে বাজেয়াপ্ত মদের বাজারমূল্য দেখে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের।
পুলিশের অনুমান, এবার প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার মদ পাচারের চেষ্টা চালিয়েছিল পাচারকারীরা। কিন্তু প্রতিবারই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় তারা। তাই এবার পুলিশের চোখে ধুলো দিতে নতুন ফন্দি এঁটেছিল। কিন্তু পুলিশ সেইসব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয়।