Cooch Behar | লটারিতে পুরস্কারপ্রাপকদের নামে ঋণ তোলার অভিযোগ! প্রতারণায় নাম তৃণমূল নেতার

Cooch Behar | লটারিতে পুরস্কারপ্রাপকদের নামে ঋণ তোলার অভিযোগ! প্রতারণায় নাম তৃণমূল নেতার

শিক্ষা
Spread the love


কোচবিহার ও তুফানগঞ্জ: অভিনব প্রতারণার ফাঁদে পড়লেন কোচবিহারের কয়েকজন ‘কোটিপতি’। তাঁরা প্রত্যেকেই লটারিতে ১ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, সেই টাকার প্রায় ৩০ শতাংশ সরকারকে উৎস কর (টিডিএস) হিসেবে দিতে হয়। তা দিয়েছিলেন তাঁরা। এরপরই তাঁরা প্রতারণার ফাঁদে পা দেন। গোটা ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের শিক্ষক নেতা জয়দেব আর্যর। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই ওই শিক্ষকের বাড়িতে ২১ ঘণ্টা তল্লাশি করেছেন আয়কর বিভাগের আধিকারিকরা। এদিন প্রতারিত কোটিপতিদের বাড়িতেও হানা দেন আয়কর কর্তারা। দপ্তরে তুলে এনে রাত পর্যন্ত জেরা করা হয় তাঁদের। তবে, আয়কর দপ্তরের কোনও আধিকারিক এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি।

লটারিতে পুরস্কারপ্রাপকরা দাবি করেছেন, প্রতারণাচক্রের পান্ডারা তাঁদের জানান, সরকারকে দেওয়া বাকি টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার পর তার কিছুটা অংশ তাদের দিতে হবে। লটারিতে পুরস্কারপ্রাপকরা এই শর্তে রাজি হয়ে যান। এরপর প্রতারকরা লটারিতে পুরস্কারপ্রাপকদের নথি ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় বলে অভিযোগ। পুরস্কারপ্রাপকদের দাবি, ঋণের বিষয়ে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। ঋণবাবদ পাওয়া টাকার কিছু অংশ তাঁদের দিয়ে বাকিটা প্রতারকরা নিয়ে নেয়।

কোচবিহারের গুড়িয়াহাটি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বকুলতলার বাসিন্দা পেশায় টোটোচালক রাম নট্ট ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে লটারিতে ১ কোটি টাকা পেয়েছিলেন।  কোচবিহার শহরের লিচুতলায় আয়কর দপ্তরের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী নট্ট বলেছেন, ‘আমরা লটারিতে ১ কোটি টাকা পেয়েছিলাম। ৩০ লক্ষ টাকা ট্যাক্স কেটে বাকি ৭০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। টাকা পাওয়ার পর জয়দেব আর্য আরেকজনকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন। বলেন, লটারির করের বাকি টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। পরে আমরা ৮ লক্ষ টাকা পেয়েছি। কিছুদিন পর বাড়িতে ব্যাংকের নোটিশ আসে। সেখানে ৩৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়। তখন আমরা জানতে পারি, একটি ব্যাংকের হলদিবাড়ি শাখা থেকে আমাদের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে। ওরা আমাদের নামে ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ তুলে ৮ লক্ষ টাকা আমাদের দেয়। বাকিটা নিয়ে নেয়।’

মঙ্গলবার জয়দেবের বাড়িতে তল্লাশির পর বেশ কিছু নথি আটক করেন আয়কর কর্তারা। সম্ভবত সেই সূত্র ধরেই বুধবার ওই পুরস্কারপ্রাপকদের বাড়িতে হানা দেন তাঁরা। তাঁদের দপ্তরে নিয়ে গিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ চলে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে অন্তত চারজন এরকম প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

গুড়িয়াহাটি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পিলখানার বাসিন্দা বুল্টন সাহাও ১ কোটি টাকা লটারিতে পেয়েছেন। তাঁর স্ত্রী মধুমিতা সাহার কথায়, ‘একইভাবে আমাদেরও ৮ লক্ষ টাকা দিয়ে বাকি টাকা প্রতারকরা নিয়ে চলে যায়। পুরো বিষয়টি পরে বুঝতে পারি। এখন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা বাড়িতে গিয়েছিলেন। স্বামীকে অফিসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’

বুল্টন পরে বলেন, ‘লটারিতে ১ কোটি টাকা পাওয়ার পর প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা টিডিএস কেটেছিল। তারপরে তুফানগঞ্জের শিক্ষক জয়দেব আর্য ও একটি ব্যাংকের হলদিবাড়ির শাখা ম্যানেজার আমাদের ওই ব্যাংকের শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলান। কিছু কাগজপত্র ও ব্ল্যাংক চেকে সই করিয়ে নিয়েছিলেন। এদিন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। ওই ম্যানেজার ও জয়দেবের সম্পর্কে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।’

মাস ছয়েক আগেই লটারিতে ১ কোটি টাকা জিতেছিলেন তুফানগঞ্জের চিলাখানার বাসিন্দা মহিদুল হোসেন। বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ আচমকাই মহিদুলের বাড়িতে হানা দেন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা। ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর মহিদুলকে নিয়ে কোচবিহারের অফিসে রওনা দেয় আয়কর দপ্তরের গাড়ি। মহিদুলের কাকা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ করেই আধিকারিকরা আমাদের বাড়িতে আসেন। লটারিতে টাকা পাওয়া নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর ভাইপোকে নিয়ে যান। কীসের জন্য ভাইপোকে নিয়ে যাওয়া হল আমরা কিছুই জানি না।’

তৃণমূলের শিক্ষক নেতা জয়দেবকে এবিষয়ে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাবে না। কিছু বলা বারণ রয়েছে।’ এরপরই তিনি ফোন কেটে দেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *