তাপস মালাকার, নিশিগঞ্জ: সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর গল্প অবলম্বনে ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় অসাধারণ এক ছবি ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’। ছবিটা মূলত এক অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে। সিনেমায় যার নাম কাঞ্চন। সে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়াতে চায়। মঙ্গলবার সকালে এক জোড়া ‘কাঞ্চন’কে নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় কোচবিহারের (Cooch Behar) নিশিগঞ্জ (Nishiganj) সিটকিবাড়ি গ্রামে। মা তাঁর দুই খুদে শিশুকে বকাঝকা করে টিউশনে যেতে বলেছেন। এতেই অভিমানে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া দুই ভাই বাড়ি ছেড়ে পায়ে হাঁটা দেয় কোচবিহার শহরের দিকে।
সিনেমায় কাঞ্চনের বাবা রাশভারী প্রকৃতির মানুষ। কাঞ্চন তার বাবাকে যমের মতো ভয় পায়। একটু ভুল হলেই যে বাবা শাস্তি দেন। তবে মাকে সে খুব ভালোবাসে। বাবার শাসনে অতিষ্ঠ হয়েই একদিন পালিয়ে কলকাতা চলে আসে কাঞ্চন। প্রথমে উঁচু দালানকোঠা, ব্রিজ, পাকা সড়ক, অনেক মানুষের ভিড় দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় কাঞ্চন।
পারডুবি গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই ভাই অবশ্য ভয় পায় মাকে। মায়ের ইচ্ছা, ছেলেরা লেখাপড়া শিখে মানুষ হবে। সংসারের অভাব দূর করবে। তাই এদিনও তিনি দুই ছেলেকে ঘুম থেকে ওঠার পর পড়তে বসতে বলেন। যেতে বলেন টিউশনে। ‘অমনোযোগী’ বলে দুই ছেলেকে বকাঝকাও করেন। আর তারপরেই মাথাভাঙ্গা শহর সংলগ্ন গ্রাম থেকে বাড়ি ছেড়ে হাঁটা দেয় দুই ভাই। প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে নিশিগঞ্জে পৌঁছে খিদেয় কাঁদতে থাকে দুই শিশু। এদিকে, বাড়ির কাজে ব্যস্ত মা মনে করেছিলেন ছেলেরা হয়তো টিউশন পড়তে গিয়েছে।
সিনেমার কাঞ্চন দেখে কলকাতা শহরের একদিকে গগনচুম্বী দালানকোঠা, অন্যদিকে উদ্বাস্তুদের মিছিল। একদিকে অনিয়ন্ত্রিত পানভোজন, অন্যদিকে খাবার নিয়ে কুকুর-মানুষের লড়াই। এসব রূঢ় বাস্তবতা কিশোর কাঞ্চনের মনে দাগ কাটে। আস্তে আস্তে ভেতরে বাড়ি ফেরার তাগিদ অনুভব করতে থাকে কাঞ্চন। মা-বাবার জন্য মন কাঁদতে থাকে কাঞ্চনের।
সকালে পথচারীদের নজরে আসে দুই শিশু কাঁদতে কাঁদতে রাজ্য সড়ক ধরে কোচবিহারের দিকে যাচ্ছে। পারডুবি গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সাবির আলি বলেন, ‘আমি নিশিগঞ্জে হিমঘরে আলুর বন্ডের জন্য এসেছিলাম। তখনই শিশু দুটির কথা জানতে পেরে খাটেরবাড়ি এলাকায় খবর পাঠাই। নিশিগঞ্জের ট্রাফিক ওসি সুনীল থাপাও ঘটনাস্থলে চলে আসেন।’
ওই দুই শিশু বাড়ি থেকে পালানোর ভুল বুঝতে পারে। পুলিশের উদ্যোগে তাদের জল, কেক কিনে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন শিশু দুটির মা সেলিনা বিবি। সেলিনা বলেন, ‘বুঝতে পারিনি না বলে ওরা এত দূর চলে আসবে।’ টোটোতে চাপিয়ে দুই শিশুকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশকে বলতে শোনা যায়, ‘ছেলেদের বকাবকি করবেন না।’