কোচবিহার: আরজি করের ঘটনার পরেও মেডিকেল কলেজগুলির নিরাপত্তা কি সত্যিই আঁটোসাঁটো হয়েছে? এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ঘটনায় এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
এমজেএন মেডিকেলের ভিতরে সেখানকার প্যাথলজি বিভাগের ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে এক ল্যাব টেকনিসিয়ানের বিরুদ্ধে। দুজন ছাত্রী বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষের কাছে এই নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেখানে শামিল হয়েছেন অন্যান্য পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকরাও। ল্যাবরেটরি টেকনলজি নিয়ে এমজেএন মেডিকেলে পড়াশোনা করানো হয়। সেখানকারই প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, ‘প্রথমে সে একদিন আমাকে ডেকে পাঠায়। আমার হাত ধরে কথা বলতে চায়। আমি বারণ করলে চড় মারে। প্রতিবাদ করলে হাসতে থাকে। সে দেখে নেবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয়। আমাদের বাজেভাবে স্পর্শ করে। অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি।’
পড়ুয়াদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই সেখানকার ল্যাব টেকনিসিয়ান অশোককুমার সাহা ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করছে। প্রতিবাদ জানিয়েও লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার ফের এধরনের ঘটনা ঘটলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পড়ুয়ারা। তাঁরা অধ্যক্ষের ঘরের সামনে জমায়েত করেন। ঘটনার তদন্তের জন্য তড়িঘড়ি চার সদস্যের একটি তদন্তকারী কমিটি তৈরি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ নির্মলকুমার মণ্ডল বলেন, ‘সাতদিনের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। অভিযোগের বিষয়টি শোনামাত্রই প্যাথলজির বিভাগীয় প্রধান সহ অন্যদের নিয়ে আলোচনায় বসেছি। আপাতত অভিযুক্ত যাতে ছাত্রছাত্রীদের সংস্পর্শে না থাকে সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এর আগেও নানারকম অভিযোগ ছিল। সহকর্মীদের সঙ্গে অশোককুমার দুর্ব্যবহার করতেন। যদিও এদিন একাধিকবার অভিযুক্তকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। হাসপাতালে গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। ফলে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগকারী এক ছাত্রীর মামা বলেছেন, ‘অভিযুক্ত নানা অছিলায় ছাত্রীদের গায়ে হাত দেয়। আমার ভাগ্নি কান্নাকাটি করতে করতে আমাকে এসব বলেছে। আগেও এরকম করা হয়েছিল কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেনি। আমরা চাই এই ঘটনার সুরাহা হোক। থানাতেও আমরা অভিযোগ জানাব।’
আরজি কর কাণ্ডের পর রাজ্যের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এমজেএনেও প্রচুর সিসিটিভি ক্যামেরা, আলো বসানো ও নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে। তারপরেও হাসপাতালের ভিতরেই এধরনের অভিযোগ ওঠায় স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এধরনের ঘটনা ঘটছিল। তাহলে কর্তৃপক্ষ আগে কেন ব্যবস্থা নেয়নি? ওই টেকনিসিয়ানের সহকর্মীরা কেন পদক্ষেপ করেননি? সেই প্রশ্নও উঠছে। দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে দোষীর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন পড়ুয়ারা।