কোচবিহার: স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে রাজবাড়ি ঘুরতে এসেছিলেন পুণ্ডিবাড়ির মানিক সাহা। দশটা টাকা দাও বলে নোংরা জামাকাপড় পরা একটি বাচ্চা মেয়ে এগিয়ে আসতেই খানিক সরে গেলেন তিনি। তাতেও রেহাই মিলল না। হঠাৎ করেই মেয়েটি জড়িয়ে ধরে তাঁকে। আচমকা এই ঘটনায় খানিক বিব্রত মানিক। অবশেষে টাকা দিয়ে রেহাই পান।
আরেকদিকে রাজবাড়ি ঘুরে ফেরার পথে রাজবাড়ির সামনের দোকান থেকে ডাব কিনে সেখানে দাঁড়িয়ে খাচ্ছিলেন এক পর্যটক। সেখানেও একই ঘটনা, বাধ্য হয়ে হাতের ডাবটি তাকে দিয়ে সেখান থেকে নিস্তার পেলেন তিনি। এই চিত্র কোনও একদিনের নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই রাজবাড়ির সামনে এই উৎপাত দেখা যাচ্ছে।
সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে সোমবার দুপুরের একটি ঘটনা। পয়সা দিতে না চাওয়ায় রাজবাড়ির ঘুরতে আসা এক পর্যটককে কাচের বোতল ভেঙে সেটা দিয়ে মারতে উদ্যত হয় ওই দলেরই এক বাচ্চা। স্বাভাবিকভাবে এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের একজন হাতে লাঠি নিয়ে তাড়া করলে তারপর সেখান থেকে ওই ভিখারির দলটি ছুটে পালায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার পরিস্থিতি যে কে সেই।
এই যাযাবর ভিখারিদের জ্বালাতনে অতিষ্ঠ রাজবাড়ি ঘুরতে আসা পর্যটক। সেইসঙ্গে রাজবাড়ির সামনে যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁরাও বিরক্ত। রাজবাড়ি ঘুরতে গেলে টিকিট কাউন্টারের যে গেটটি রয়েছে তার সামনে প্রতিদিনই ঘটে চলেছে এই ধরনের দৌরাত্ম্য। জানালেন, সেখানকার ব্যবসায়ীরা। যতক্ষণ রাজবাড়ির গেট খোলা থাকে ততক্ষণ এই সাত থেকে ১৪ বছরের ভিখারির দলটি সকলকে জ্বালাতন করতে থাকে।
গেটের পাশেই পরোটা চা ঠান্ডা জলের ঠ্যালা নিয়ে বসেন হরি মিত্র। বললেন, ‘ওদের দৌরাত্ম্যে আমাদের ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়। কেউ এসে এখানে দাঁড়িয়ে দু’দণ্ড শান্তিতে কিছু খেতে পারে না। ওরা এসে হাত ধরে, জামা ধরে, ব্যাগ ধরে এমন টানাটানি করে তাতে সকলেই খুব বিরক্ত হয়।’ একই কথা শোনা গেল ওখানকার ব্যবসায়ী সুশান্ত দাস ও ভিকি দামের গলায়। এখানে যারা ভিক্ষা করতে আসছে তারা প্রত্যেকে এই পয়সা দিয়ে নেশার দ্রব্য কিনে নেশা করে বলে অভিযোগ। এদের সকলেরই একটাই বক্তব্য, পুলিশ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করুক। রাজবাড়ির গেটে রক্ষী থাকায় তারা গেটের ভেতরে ঢুকতে পারে না। এই রক্ষীদের কাছেও একটা লাঠি রয়েছে দেখা গেল। মাঝেমধ্যে সেই লাঠি উঁচিয়ে তাদেরকে ভেতর থেকেই তাড়া করতে দেখা যায়।
রাজবাড়ি দেখতে এসে যদি পর্যটকদের এই ধরনের হেনস্তার শিকার হতে হয় তা কোচবিহারবাসীর পক্ষে মোটেও সুখকর নয় এবং পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষেও যথেষ্ট লজ্জার। এই মত বিশিষ্ট আইনজীবী শিবেন্দ্রনাথ রায়ের। তাঁর বক্তব্য, ‘হঠাৎ কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হওয়ার আগে পুলিশ দ্রুত এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিক।’ এ প্রসঙ্গে ডিএসপি ডিআইবি বিনোদ গজমের বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমরা অবশ্যই একটা কিছু ব্যবস্থা করব।’