কোচবিহার: জুলাই থেকে মিড-ডে মিলের টাকা ঢুকছে না কোচবিহার জেলার প্রাথমিক, উচ্চপ্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে। পরিস্থিতি এমনই যে অনেক স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও শিক্ষকরা নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে কোনওভাবে চালাচ্ছেন। তবে শিক্ষকদের বক্তব্য, এভাবে আর সম্ভব নয়, অবিলম্বে টাকা না ঢুকলে মিড-ডে মিল বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন তাঁরা।
চরকেরকুঠি দেওয়ানবস পঞ্চম পরিকল্পনা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক সরকার বলেন, ‘আমার স্কুলে প্রি-প্রাইমারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে। মোট ১১২ জন ছাত্রছাত্রী। এই অবস্থায় গত জুলাই, অগাস্ট মাসের মিড-ডে মিলের টাকা এখনও ঢোকেনি। এত পড়ুয়াকে প্রতিদিন কীভাবে খাওয়াব? খুবই সমস্যায় পড়েছি।’ তিনি জানালেন, রাঁধুনি, সহায়করা পারিশ্রমিক পাননি। তাঁরাও প্রতিদিন সেকথা তোলেন। এমনটা চলতে থাকলে মিড-ডে মিল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলে বক্তব্য প্রধান শিক্ষকের।
চণ্ডীশাল পঞ্চম পরিকল্পনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন বর্মনের মন্তব্য, ‘এখানে ৫৯ জন পড়ুয়া রয়েছে। দু’মাসের টাকা এখনও ঢোকেনি। টাকার সমস্যার কারণে রান্নার কাজে নিযুক্তরা রান্না বন্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাচ্চারা খাবার পাবে না, এই ভেবে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে মিড-ডে মিল চালাচ্ছি। অবিলম্বে টাকা না পেলে আর বেশিদিন এভাবে চালানো সম্ভব হবে না।’
কোচবিহার জেলায় ১,৮৫৩টি প্রাথমিক, ৩০০টির মতো উচ্চপ্রাথমিক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে ২৫০টি স্কুল রয়েছে। সবমিলিয়ে চার লক্ষের মতো পড়ুয়া মিড-ডে মিলের আওতায় রয়েছে। প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের প্রতিদিনের মিড-ডে মিল বাবদ ৬.৭৮ টাকা করে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের ১০.১৭ টাকা করে বরাদ্দ। পাশাপাশি, রাঁধুনিদের জন্য পারিশ্রমিক রয়েছে। এই টাকা স্কুলের বিশেষ অ্যাকাউন্টে ঢোকে। অথচ গত দু’মাস থেকে এই টাকা ঢুকছে না।
কোচবিহার-১ ব্লকের মিড-ডে মিলের দায়িত্বে থাকা কর্মী মন্তোষ গুহ বলেন, ‘এই ব্লকে মোট ১৮০টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। ব্যাংকের সমস্যার কারণে কোনও স্কুলেই এই টাকা ঢোকেনি। তবে এটা শুধু এই ব্লকের সমস্যা নয়, গোটা জেলাতেই একই অবস্থা।’
মাথাভাঙ্গার কোদালখেতি হরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘মিড-ডে মিলের দায়িত্বে থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। খুবই সমস্যায় পড়েছি।’ একই বক্তব্য তুফানগঞ্জের নাটাবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত সেন, দিনহাটার লালবাহাদুর শাস্ত্রী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্তকুমার রায়েরও।
বিষয়টি নিয়ে ওসি মিড-ডে মিল তথা ওসি এডুকেশন জয়িতা খাটুয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন না তোলায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।