দেবদর্শন চন্দ, কোচবিহার: ছেলেদের পোশাক আর মেয়েদের পোশাক যাঁরা তৈরি করেন তাঁদের মধ্যে এখন দুস্তর ফারাক হয়ে গিয়েছে। একই পেশায় আজ দু’ধরনের ছবি। পুজোর মরশুম এলেও এখন আর আগের মতো পসার নেই ছেলেদের জামা-প্যান্ট তৈরি করা দর্জিদের। কিছু দোকানে অর্ডার এলেও তা হাতেগোনা। তাঁদের আক্ষেপ, রেডিমেড কাপড়ের জনপ্রিয়তায় রুজিতে কোপ পড়েছে। এদিকে, একেবারেই উলটো ছবি মেয়েদের পোশাক তৈরির দর্জির দোকানগুলিতে। পুজোর মাস দেড়েক বাকি থাকলেও এখন থেকেই বুকিং নেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকেই। মেয়েদের শাড়ি কিংবা চুড়িদার পিস অনলাইনে পাওয়া গেলেও শাড়ির ফলস পিকো করতে কিংবা লেহেঙ্গা, চুড়িদার তৈরি করতে অনেককেই ছুটতে হচ্ছে দর্জির দোকানে। অনলাইনের যুগেও ব্যবসা একইভাবে ধরে রেখেছেন মেয়েদের পোশাক তৈরি করা দর্জিরা।
এদিন বিশ্বসিংহ রোড এবং বাজারের মহিলাদের টেইলার্সের দোকানগুলিতে গিয়ে দেখা গেল, কারও দম ফেলবার ফুসরত নেই। বাজারের সঞ্জয় সাহার দোকানে ১৬ জন দর্জি সারাবছর কাজ করেন। সঞ্জয় জানালেন, ‘প্রতিবারের মতোই এবারেও পুজোর আগে কাজের খুব চাপ। সকাল ১১টা থেকে এখনও রাত ১২টা কিংবা ১টা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। কাজের চাপ থাকায় এই মাসের পর থেকে আর পুজোর পোশাকের অর্ডার নেওয়া হবে না।’ শুধু দোকানেই নয়, বাড়িতে বসেও অনেকে অবসর সময় কাটাতে শাড়ির ফলস পিকো করছেন। শহরের বাসিন্দা সুস্মিতা দে দাস বাড়িতে বসেই মেয়েদের পোশাক তৈরির কাজ করে থাকেন। সুস্মিতা বললেন, ‘পুজোর আগে প্রতিবারই শাড়ির ফলস লাগাতে কিংবা ব্লাউজ তৈরি করতে ক্রেতাদের ভিড় হয়। এবারেও এখন পর্যন্ত প্রচুর অর্ডার চলে এসেছে।’
এদিন ভবানীগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা গেল ছেলেদের পোশাক তৈরির দোকানগুলিতে ক্রেতাদের সমাগম নেই বললেই চলে। খুব বেশি অর্ডার না মেলায় কর্মীসংখ্যাও কমেছে দোকানগুলিতে। দর্জি অভিজিৎ দাস জানালেন, ‘নতুন প্রজন্মের ছেলেরা বেশিরভাগই ঝুঁকছে জিনসে। কাপড় কিনে প্যান্ট-শার্ট বানাতে অনীহা তাদের। অনেকেই আবার অনলাইনে কিংবা রেডিমেড পোশাকে ভরসা রাখছেন।’ এদিকে, ছেলেদের দর্জির দোকানগুলিতে কাজের চাপ সেভাবে না থাকায় দোকানে বসেই গল্প করছিলেন বিষ্ণুপদ বণিক। তাঁর দোকানে একসময় তিন থেকে চারজন দর্জি কাজ করলেও বর্তমানে মাত্র একজন রয়েছেন। আক্ষেপের সুরেই বিষ্ণুপদ বললেন, ‘অনলাইন এবং রেডিমেড পোশাকে নির্ভরতায় পুজোর মরশুমে খদ্দের নেই বললেই চলে। এমনও সময় গিয়েছে যে পুজোর আগে অনেক রাত অবধি কাজ হত।’
দর্জিদের অনেকেই বলছেন, জামা-প্যান্ট থেকে শুরু করে কুর্তা, পাঞ্জাবি সবকিছুই এখন রেডিমেড পাওয়া যায়। কাপড় কিনে বানাবার ঝক্কি এখন নিতে চান না সাধারণ মানুষ। আগে সরকারি স্কুল পড়ুয়াদের ইউনিফর্মও স্থানীয় দর্জিরা তৈরি করলেও পরবর্তীতে সেই দায়িত্বও নিয়েছে সরকার। সেগুলি এখন টেন্ডার করে তৈরি করানো হয়।
সবমিলিয়ে মেয়েদের দর্জিদের কদর থাকলেও আগের চেয়ে অনেকটাই কাজ কমেছে ছেলেদের পোশাক তৈরি করা দর্জিদের।