কোচবিহার: প্রত্যেকদিন সকাল হতেই স্কুলে যাওয়ার তোড়জোড় পড়ে যেত কোচবিহারের ওকরাবাড়ির ওই বাড়িতে। শুক্রবার সকালটা শুরু হল একদমই অন্যভাবে। বৃহস্পতিবার সকালের একটা খবরে সবটা ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। এদিন ঘর থেকে বেরোলেন না শিক্ষক দম্পতি। অনেকটা একই ছবি দেখা গেল কোচবিহারের চকচকার এক শিক্ষাকর্মী দম্পতির বাড়িতেও। চাকরি হারিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে কীভাবে দেখবেন, ছেলেকে কীভাবে পড়াবেন, কী খাওয়াবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
কোচবিহারের ওকরাবাড়ির বাসিন্দা মৌসুমি মল্লিক কোচবিহার-১ ব্লকের গারোপাড়ার আদর্শ হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর পড়ানোর বিষয় দর্শন। অন্যদিকে, তাঁর স্বামী হীরককুমার সাউও দর্শনের শিক্ষক ছিলেন। বছর ছয়-সাতেক আগে শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার পর থেকে সংসার ভালোভাবেই কাটছিল। অনেক স্বপ্নও দেখেছিলেন দুজনে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একসঙ্গে দুজনের চাকরি চলে গিয়েছে। কলমের একটা খোঁচায় শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে হঠাৎ করে দুজনে বেকার হয়ে পড়লেন। ফলে এরপর কী হবে, সেটা ভেবেই শিউরে উঠছেন দুজনে। মৌসুমি বলেন, ‘হঠাৎ করে যে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না। বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। তাঁদের কীভাবে চিকিৎসা করাব, কীভাবে দেখভাল করব, কিছুই ভেবে উঠতে পারছি না। হঠাৎ করে চোখের সামনে সমস্তটা যেন অন্ধকার হয়ে গেল।’ এরপরের পরিকল্পনা নিয়ে কিছু ভেবেছেন? তাঁর কথায়, ‘এখন তো আর কিছু করার নেই। বেঁচে থাকার জন্য আবার পরীক্ষা দিয়ে চাকরির চেষ্টা করব। এছাড়া আর কী-ই বা করতে পারি?’
অন্যদিকে, বাবুরহাটের চকচকার দম্পতি অভিজিৎ বর্মন ও সুদেষ্ণা পরিয়াল বর্মনের গল্পটাও একই। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে স্বচ্ছন্দে সংসার করছিলেন। অভিজিৎ কালজানি জুনিয়ার হাইস্কুলের এবং সুদেষ্ণা কোচবিহার-২ ব্লকের উত্তর খাপাইডাঙ্গা হাইস্কুলের গ্রুপ-ডি’র কর্মী ছিলেন। বৃহস্পতিবারের ঘটনা তাঁদেরও জীবনও তছনছ করে দিয়েছে। অভিজিৎ বললেন, ‘ছেলে জেনকিন্স স্কুলে পড়ে। বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন। সকলেই আমাদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু হঠাৎ করে এমন হয়ে যাওয়ায় অথই জলে পড়লাম।’ কিছুটা থেমে বললেন, ‘যদি এমনও হত যে আমাদের দুজনের মধ্যে একজনের চাকরি যেত, আরেকজনের থাকত, তাহলেও তো বাঁচতে পারতাম। কিন্তু এখন তো বাঁচার পথটাই খোলা নেই। মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।’ সামনের রাস্তাটা কঠিন। সেই রাস্তায় কীভাবে চলবেন, সেটা ভেবেই দিশেহারা দুই দম্পতি।