কোচবিহার: ঘাসফুলে কোন্দলের আঁচ কোচবিহার পুরসভায়। চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে কাউন্সিলারদের দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, কাউন্সিলারদের আনাগোনা ক্রমশ কমছে পুরসভায়। সেইসঙ্গে রবির প্রতি তাঁদের অসহযোগিতাও যেন ধীরে ধীরে চওড়া হচ্ছে। দু-চারজন ছাড়া বাকি কাউন্সিলাররা মাসখানেক ধরে পুরসভায় আসছেন না বললেই চলে। এনিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও চর্চা শুরু হয়েছে।
কোচবিহার পুরসভায় ২০ জন কাউন্সিলার রয়েছেন। এর মধ্যে দুজন বামেদের। বাকি ১৮ জনই তৃণমূলের। কিছুদিন আগেও পুরসভায় গেলে চেয়ারম্যানের ঘরে ছয়-সাতজন কাউন্সিলারকে দেখা যেত। এরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার চন্দনা মহন্ত, ২ নম্বরের উজ্জ্বল তর, ৩ নম্বরের মায়া সাহা, ৬ নম্বরের শুভ্রাংশু সাহা, ১৫ নম্বরের শম্পা রায় ও ১৯ নম্বরের অভিজিৎ মজুমদার। এছাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পম্পা ভট্টাচার্য ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তথা ভাইস চেয়ারম্যান আমিনা আহমেদকেও মাঝেমধ্যে দেখা যেত সেখানে। কিন্তু দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক (হিপ্পি) ও মন্ত্রী উদয়ন গুহর গোষ্ঠীর সঙ্গে রবি-পার্থ গোষ্ঠীর দূরত্ব বাড়তেই তার আঁচ পড়েছে পুরসভায়। চেয়ারম্যানের ঘরে ১৯ নম্বরের কাউন্সিলার অভিজিৎ ছাড়া এখন আর কারও দেখা প্রায় মেলে না। সম্প্রতি পুরসভায় চেয়ারম্যানের ঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪-৫ জন কাউন্সিলার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি কোচবিহারে আসবে বলে চেয়ারম্যান আগে থেকে চিঠি দিয়ে সমস্ত কাউন্সিলারকে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু তারপরও সেদিন চেয়ারম্যান সহ সব মিলিয়ে মাত্র ৫ জন কাউন্সিলার উপস্থিত ছিলেন। পুরসভা লাগোয়া শহিদবাগ মঞ্চে পুর স্তরের ভাওয়াইয়া অনুষ্ঠানেও মাত্র দু-তিনজন কাউন্সিলারকে দেখা গিয়েছে। অথচ ৩১ জানুয়ারি ঘুঘুমারির কদমতলায় হিপ্পি-উদয়নদের উদ্যোগে আয়োজিত তৃণমূলের জনসভা মঞ্চে ১০-১১ জন কাউন্সিলার উপস্থিত ছিলেন। জনসভা শেষে সেদিন দলের জেলা কার্যালয়ে তৃণমূলের অধিকাংশ কাউন্সিলার চেয়ারম্যান রবির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে কাগজে সই করেন। ১ ফেব্রুয়ারি পুরসভায় বোর্ড মিটিং ছিল। সেই মিটিংয়ে কোরাম হবে না বুঝতে পেরে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বোর্ড মিটিং বাতিল করেন। এরপর এখন পর্যন্ত তিনি আর সেই মিটিং করতে পারেননি।
কর্মী-আধিকারিকদের নিয়ে পুর প্রশাসনের কাজকর্ম রবি কোনওরকমে চালাচ্ছেন বটে, তবে বোর্ড মিটিং ফের কবে হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু জানাতে পারছেন না। রবি বলেন, ‘যখন প্রয়োজন হবে তখন বোর্ড মিটিং হবে।’ অন্যদিকে, আচমকা ভোল বদলের কারণ কী? ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার চন্দনা মহন্ত বলছেন, ‘তিন-চারদিন ধরে বাইরে রয়েছি। তাছাড়া সময়ও হচ্ছে না।’ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মায়া সাহার যুক্তি, ‘শরীরটা ভালো না। তাছাড়া এখন পুরসভায় যাওয়ার তেমন দরকার পড়ছে না।’ আবার ৬ নম্বরের কাউন্সিলার শুভ্রাংশু সাহার যুক্তি, ‘সম্প্রতি আমি কুম্ভতে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তাই বাড়ি থেকে সেভাবে বের হচ্ছি না।’ তাঁরা এমন বললেও রাজনৈতিক মহল বলছে, পুরসভায় ঘাসফুলের কোন্দল স্পষ্ট। এবিষয়ে জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।