কোচবিহার: মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতেই জমে যাচ্ছে জল। সেই জল ঢুকে যাচ্ছে বেশিরভাগ আবাসনের সিঁড়ির ঘরে। ইট পেতেও খুব সুবিধা হচ্ছে না। সেই ইটও ডুবে গিয়েছে জলের তলায়। সিঁড়ির ঘরে জল জমায় স্কুল যাওয়ার সময় কোলে বা পিঠে করে বের করতে হচ্ছে বাচ্চাদের। জমা জলের পাশেই রয়েছে বিদ্যুতের সুইচ থেকে শুরু করে প্রতিটি আবাসনের মিটার বক্স। ফলে বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবস্থার পাশের জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমনই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন রাজবাড়ি হাউজিং কমপ্লেক্সের বাসিন্দারা। এবিষয়ে উদাসীন হাউজিং কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
নোংরা জল মাড়িয়ে বিভিন্ন কাজে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া থেকে অফিস যাত্রী সকলকে। এই জল মাড়িয়ে টিউশন করতে যেতে হয় বাড়ির বাচ্চাদের। কখনও এমন হয় জল দেখে আবাসনে না ঢুকে ফেরত চলে যান গৃহশিক্ষক, এমনই কথা শোনা যায় সি/১ আবাসনের অর্পিতা সরকারের গলায়। তাঁর কথায়, ‘এই জলে সাপ, জোঁক থেকে শুরু করে নানা ধরনের পোকামাকড়ের ভয় উপেক্ষা করেই হাঁটাচলা করতে হয়।’ একই বক্তব্য শোনা গেল মামণি রায়ের গলাতেও। তিনি বললেন, ‘সবচেয়ে অসুবিধা হয় সকালে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময়। জল জমে থাকায় ঘরে যা আছে তাই দিয়ে চালাতে হচ্ছে। আমাদের আবাসনের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেটে বারবার জানানো সত্ত্বেও কোনওরকম লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা পুরসভাকে জানিয়েছি। যেখান থেকেও কোনওরকম সদর্থক কিছু পাইনি। আর ঠিক এই কারণেই দিনের পর দিন আবাসনে লোক কমে যাচ্ছে।’ অনেকেই এখানে আসতে চান না পরিস্থিতির জন্য, বললেন শ্রেয়া মল্লিক দাস। জল জমার কারণে রান্নাঘর ও বাথরুমের বেহাল দশা হয়েছিল। সদ্য সেগুলো সারাই করার উদ্যোগ নিয়েছে হাউজিং ডিরেক্টরেট।
কোচবিহার সদরের হাউজিং ডিরেক্টরেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শ্রীমন্ত মণ্ডল বলছেন, ‘আবাসনের ভেতরে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিকই রয়েছে। আবাসনের বাইরে যে নর্দমা রয়েছে তা দিয়ে জল যাওয়ার উপায় নেই। তাই ভেতরের জল বাইরে যেতে পারছে না। বহুবার পুরসভাকে নর্দমা পরিষ্কার করতে চিঠি দিয়েছি। উত্তর পাইনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পুরসভাকে শেষ চিঠি তাঁরা পাঠিয়েছিলেন অবশ্য বছর দেড়েক আগে। এ ধরনের কোনও চিঠির কথা জানা নেই বললেন পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘রাজবাড়ি আবাসনের জায়গাটি অনেকটাই নীচু। বর্ষায় জল জামাটা স্বাভাবিক। পুরসভার তরফে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়।’ যদিও হাউজিং ডিরেক্টরেটের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মিহির সরকারের বলছেন, ‘আমাদের দপ্তর আর পুরসভা যদি একসঙ্গে কাজ না করে তাহলে এই জল জমার সমস্যার সমাধান হওয়া অসম্ভব ব্যাপার।’
আবাসিকরা প্রতিবছরের মতো এবছরও শুরু করেছে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। মণ্ডপ প্রায় তৈরি, আবাসিকদের এখন চিন্তা পুজোর অঞ্জলি ঠিকঠাক দিতে পারবেন তো!