মেখলিগঞ্জ: প্রায় দুই দশক ধরে কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতকে রক্ষা করে চলেছে তিস্তার বাঁধটি। গতবছর থেকে বাঁধে দেখা দিেয়ছে অসংখ্য রেইনকাট। বর্ষার আগে বাঁধটি সংস্কার না করা হলে প্রায় তিরিশ হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়বেন। ভেসে যাবে কৃষিজমি, ভিটেমাটি। সব হারিয়ে কার্যত নিঃস্ব হয়ে যেতে হবে তাঁদের। স্থানীয় তরুণ তাপস রায়ের আশঙ্কা, ‘বাঁধটা বাঁচাতে না পারলে কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের একটা বড় অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’ সেচ দপ্তরের তরফে অবশ্য বর্ষার আগে বাঁধ সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
মেখলিগঞ্জ ব্লকের সীমান্তবর্তী কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে তিস্তা নদীর পাড় ঘেঁষে রয়েছে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ। বাঁধটি প্রায় কুড়ি বছর ধরে বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের তিস্তার গ্রাস থেকে রক্ষা করছে। এই এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে ২৫ পয়স্তি, সরকারপাড়া, ওরাওঁপাড়া সহ একাধিক গ্রাম। একইসঙ্গে এই বাঁধের ওপর নির্মিত পাকা রাস্তা স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। এই বাঁধেই রয়েছে বিএসএফের দুটি আউটপোস্ট, যা সীমান্ত রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সেই গুরুত্বপূর্ণ বাঁধটি এখন ভাঙনের মুখে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গতবছর থেকে বাঁধজুড়ে দেখা গিয়েছে ৪০-৫০টি ‘রেইনকাট’। বাঁধের রাস্তা তৈরি হওয়ার সময় চার-পাঁচ বছর আগে বাঁধটিও সংস্কার করা হয়। সেই শেষবার। তারপর থেকে আর বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ সেরকম হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা কার্তিক রায়ের আশঙ্কা, ‘তিস্তার স্রোত সরাসরি বাঁধ বরাবর চলছে। নদীর জলস্তর আমাদের গ্রামের চেয়ে অনেকটাই উঁচুতে। বঁাধে সামান্য ফাটল হলেই পুরো এলাকা জলের তলায় চলে যাবে।’
কোথাও কোথাও বাঁধের পাশের রাস্তার একাংশ ইতিমধ্যে ভেঙেও পড়েছে। এলাকাবাসী তাপস রায়, শ্যামল রায়, দেবারু রায়দের কথায়, বারবার সেচ দপ্তর এবং প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারপরও কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দ্রুত বাঁধটি সংস্কার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রঞ্জন রায়ের কথায়, ‘দুই বছর আগে সিকিমে কী ভয়ানক অবস্থা হয়েছিল, সেটা তো আমরা সকলেই জানি। এখানেও যদি সেরকম হয়, ভাবতেই ভয় হচ্ছে। এতকিছুর পরেও প্রশাসনের টনক নড়ছে না।’
মেখলিগঞ্জের বিডিও অরিন্দম মণ্ডল বাঁধের অবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানালেন। বিষয়টি নিয়ে আশ্বস্ত করলেন মেখলিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি নিয়তি সরকারও। জানালেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে রিপোর্ট পাঠানো হবে। সেচ দপ্তরের উত্তরবঙ্গ বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বললেন, ‘বর্ষার আগেই সব বাঁধের অবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বর্ষা দোরগোড়ায়, আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে বাঁধ সংলগ্ন গ্রামগুলির বাসিন্দাদের। তাঁরা অপেক্ষা করছেন, কবে প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে।