কোচবিহার: পয়লা বৈশাখের সকাল। ছুটির দিনে আয়েশ করে খবরের কাগজ পড়ার পর রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে ফরমায়েশ করলেন, গিন্নি আজ একটু শুক্তো, বোরোলির ঝাল আর কষা কষা করে পাঁঠার মাংস হবে নাকি!
কাট টু বাস্তব। চড়া বৈশাখী গরমে এমন ‘অর্ডার’ শুনলে গিন্নি তো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবেন। তা বলে কি বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে পেটপুরে ভালোমন্দ খাওয়া হবে না? মুশকিল আসান করতে কোচবিহার শহরের একের পর এক রেস্তোরাঁ মেনু কার্ডে বাঙালিয়ানা ঠেসে হাজির আপনার মনোরঞ্জনে। শর্ত কেবল একটাই, ফ্যালো কড়ি মাখো তেল। ভোজনরসিকদের রসনাবিলাসের কথা মাথায় রেখে বাঙালি স্পেশাল মেনুতে চমক রাখছে শহরের রেস্তোরাঁগুলি। শুক্তো থেকে শুরু করে ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাক, বোরোলি মাছের ঝাল, পাঁঠার মাংস, রয়েছে সবকিছুই। বিশেষ দিনে ভিড়ের কথা চিন্তা করে আগেভাগে টেবিল বুক করে রাখতেও দেখা গিয়েছে শহরবাসীকে। শহরের বিশ্বসিংহ রোড, সুনীতি রোড এলাকার রেস্তোরাঁগুলিতে ঢুঁ মারতেই দেখা গেল, নতুন বছর উপলক্ষ্যে বিশেষ আয়োজনের শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে সেখানে।
বর্ষবরণ হোক কিংবা দুর্গাপুজো। যে কোনও উপলক্ষ্যেই শহরের রেস্তোরাঁগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে। বিশ্বসিংহ রোড এলাকায় রেস্তোরাঁ রয়েছে রাজু ঘোষের। বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে রেস্তোরাঁর মেনু সাজাচ্ছিলেন তিনি। বললেন, ‘নতুন বছরে প্রতিটি পদেই থাকবে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। ইতিমধ্যেই কয়েকজন টেবিলও বুক করে গিয়েছেন। বাংলা নতুন বছরের কথা মাথায় রেখে আমরা বাঙালি খাবারদাবারে বিশেষ জোর দিয়েছি। এসব ছাড়াও চাইনিজ এবং কন্টিনেন্টাল খাবারও থাকবে।’
কী কী থাকবে পয়লা বৈশাখের এই মেনুতে? রেস্তোরাঁগুলি ঘুরে জানা গেল, রকমারি পদগুলির মধ্যে থাকছে আমপানা শরবত, গন্ধরাজ স্যালাড, কড়াইশুঁটির কচুরি, শুক্তো, ছানার কালিয়া, বোরোলি মাছের চচ্চড়ি, কাতলা ভাপা, এঁচোড় চিংড়ি, আড় মাছের ঝাল, ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাক, চিতল কালিয়া, ঢেঁকিশাক, ফ্রায়েড রাইস, বাসন্তী পোলাও, পনির দো পিঁয়াজা, ভাপা ইলিশ সহ নানান আইটেম। শেষ পাতে থাকবে চাটনি, পাঁপড়, মিষ্টি আর দইও। সুনীতি রোড এলাকার এক রেস্তোরাঁর কর্মকর্তা সুরজ ঘোষের কথা, ‘চিংড়ির মালাইকারি থেকে শুরু করে মাছ, মাংসের বিভিন্ন পদ তৈরি করা হবে। থাকবে বিভিন্ন ধরনের শরবত। বর্ষবরণে বাঙালি খাবারে থাকবে বিশেষ বৈচিত্র্য।’
বাঙালি খাবারের আয়োজনে পিছিয়ে নেই শহরতলিও। ঘুঘুমারি চৌপথি সংলগ্ন একটি হোটেলে বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে বিশেষ থালির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দোকানের কর্ণধার শিশির দে বলেন, ‘একেবারে বাড়ির খাবারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল, ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাক, ভাপা ইলিশ, কষা খাসির মাংস সহ রকমারি খাবার এদিন বানানো হবে।’