College of North Bengal | এনবিইউ’র জটে আটকে উপাচার্য নিয়োগ

College of North Bengal | এনবিইউ’র জটে আটকে উপাচার্য নিয়োগ

শিক্ষা
Spread the love


শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Courtroom) হস্তক্ষেপের পরও উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপালের ঠান্ডা লড়াই মিটছে না। যার জেরে আটকে গিয়েছে ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ। এক্ষেত্রেও স্পষ্ট হচ্ছে দু’পক্ষের পছন্দ-অপছন্দের টানাপোড়েন। আর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (College of North Bengal)  হয়ে উঠেছে তার কেন্দ্রবিন্দু। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন যাদবপুরের অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র। সূত্রের খবর, তিনিই রাজ্য সরকারের প্রথম পছন্দ। আবার উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের হয়ে গোটা প্রক্রিয়াতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে রাজ্যপালের সঙ্গে ওমপ্রকাশের সংঘাত অজানা নয় কারওই। তাই ওমপ্রকাশকে একেবারেই পছন্দ নয় রাজ্যপালের। ওমপ্রকাশকে নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগে জট ক্রমেই বাড়ছে বলেই মনে করছেন শিক্ষা দপ্তরের অনেক কর্তা।

ওমপ্রকাশ আপাতত বিতর্কে ঢুকতে চাইছেন না। তাঁর কথা, ‘একতরফাভাবে কিছু হয়নি। তাই হয়তো কারও ক্ষোভ হতে পারে। আমাকে রাজ্যপালের পছন্দ নাই হতে পারে। তার জন্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো কোনও দোষ করেনি। তাছাড়া সবটাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হচ্ছে। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব নেই।’

শিক্ষা দপ্তরের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, শুধু ওমপ্রকাশ নয়, রাজ্যপালের নিয়োগ করা উপাচার্যদের লিয়েন, অর্থ খরচ ইত্যাদি নিয়েও নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। ওই উপাচার্যদের পুরোনো পদে ফেরা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে শিক্ষা দপ্তর। রাজ্যপালের নির্দেশে দায়িত্বে থাকাকালীন গাড়ি, ভ্রমণ, থাকা, খাওয়া সহ বিভিন্ন কাজে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন অস্থায়ী উপাচার্যরা। বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচে কোনও অনুমোদন নেই রাজ্য বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির। ‘অনুমোদনহীন’ ওইসব খরচের দায়ভার কে নেবে তা নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। উত্তরবঙ্গের সবক’টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এসবের মধ্যেই পদ্ধতি মেনে লিয়েন না নেওয়ার জন্য রাজ্যপাল নিযুক্ত উপাচার্যদের চাকরিতে ছেদ পড়বে কি না সেবিষয়ে আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছেন শিক্ষা দপ্তরের কর্তারা। সূত্রের খবর, বিপদ বুঝে সমস্যা মেটাতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছেন বেশ কয়েকজন অস্থায়ী উপাচার্য। উপাচার্য নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে। আবার রাজ্য সরকারের কর্মী হওয়ায় অধ্যাপকদের চাকরির নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে রাজ্য সরকারের হাতে। শিক্ষকদের একটা বড় অংশের মতে, দুই পক্ষই একে অপরের ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তাঁরা যে সহজে ছেড়ে দেবেন না তা অবশ্য ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর বক্তব্য, ‘সময় এলেই কী হবে সেটা সবাই বুঝতে পারবেন। রাজ্য সরকারের নিয়মেই বিশ্ববিদ্যালয় চলে। আইন ভেঙে যেসব কাজ হয়েছে তার দায়ভার রাজভবনেরই। আমরা আইন মেনেই চলব। লিয়েনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে যা যা পদক্ষেপ করার তা শীর্ষ আদালতই করবে।’ রাজ্যপাল নিযুক্ত উপাচার্যদের কেউই অবশ্য এসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলে নতুন সংঘাত তৈরি করতে চাননি।

উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপাল নিযুক্ত উপাচার্য এক বছরে শুধু গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ করেছেন প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অনুমোদনহীন’ খরচের পরিমাণ ৫০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। শিক্ষা দপ্তরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও। লিয়েনের পাশাপাশি রাজ্যপাল নিযুক্ত উপাচার্যদের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মকেও হাতিয়ার করছে রাজ্য। রাজ্যপালকে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে আগেই রাজভবনের চক্ষুশূল হওয়া ওমপ্রকাশকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে বার্তা দিয়েছে রাজ্য। সম্প্রতি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের খসড়া বিধি-২০২৫ পর্যালোচনা কমিটির সদস্য করে রাজ্য বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা ওমপ্রকাশের সঙ্গেই আছে। ফলে তাঁর নাম নিয়ে রাজ্যপাল নিমরাজি হলে তারাও যে অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়ে কঠোর হবে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। আপাতত এই টানাপোড়েন কাটার অপেক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *