মনজুর আলম, চোপড়া: মাধ্যমিকে রাজ্যে পাশের হার বেড়েছে। কিন্তু চোপড়া (Chopra) ব্লকে এ নিয়ে কোনও আলোচনার জো নেই। ব্লকে দেড় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় উিদ্বগ্ন চোপড়ার শিক্ষা মহল। এত সংখ্যক পড়ুয়া ফেল করল কেন? এর পিছনে উঠে আসছে বিভিন্ন কারণ।
ব্লকে এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৪,২৭৬ জন। তার মধ্যে প্রায় ৩৫০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। মোট ১৪টি স্কুলে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ২,২৬৭ জন। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার একাংশ স্কুলে অর্ধেকের বেশি পড়ুয়া ফেল করেছে। চোপড়া হাইস্কুলে ফেল করেছে ৫২ জন। চোপড়া গার্লস হাইস্কুলে ১০২ জন ফেল করেছে। মূলত স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণেই এই অবস্থা মনে করছে শিক্ষা মহল। তবে এও দেখা যাচ্ছে, গ্রামাঞ্চলের বহু অনিয়মিত পড়ুয়া শুধুমাত্র সরকারি সুবিধা নেওয়ার জন্য স্কুলে নাম তোলে। এই অনিয়মিত পড়ুয়াদের মধ্যেই অকৃতকার্যের সংখ্যা বেশি।
দাসপাড়া হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জাকির হুসেন জানান, প্রায় ১০০ জন অনিয়মিত পড়ুয়ার মধ্যে আমাদের স্কুলে পাশ করেছে মাত্র ৮ জন। তাছাড়া নিয়মিত পড়ুয়াদের মধ্যে ৫২ জন ফেল করেছে। লক্ষ্মীপুর হাইস্কুলের ছবিটাও ভালো নয়। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মধু দাস অবশ্য তা মানতে নারাজ। তঁার ব্যাখ্যা, ‘অনিয়মিত পড়ুয়াদের বেশিরভাগই অকৃতকার্য হওয়ায় ফেলের হার বেশি দেখাচ্ছে। নিয়মিত পড়ুয়া ৩৫০ জনের মধ্যে ২৪৯ জন পাশ করেছে।’ প্রশ্ন ওঠে, তাহলে ১০১ জন ফেল করল কীভাবে? এক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, ‘অনেকে পড়াশোনার মাঝে বাইরে কাজ করতে চলে যায়।’
চোপড়া গার্লস হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মিলি সান্যাল ১০২ জন ফেল করার নেপথ্যে সেই অনিয়মিত পড়ুয়ার তত্ত্ব খাড়া করেছেন। চোপড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত বসাক অবশ্য করোনাকালের প্রসঙ্গ টেনেছেন। তঁার কথায়, ‘কোভিড অতিমািরতে পড়াশোনার ওপর প্রভাব পড়েছে। সেটা এখনও কাটেনি।’
শিক্ষকদের মতে, টেস্টে ঢালাও পাশ, মোবাইলে আসক্তি, বাইরে কাজ করতে যাওয়া এবং স্কুল ছুটি থাকার দরুন পড়ুয়াদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে। অভিভাবকরাও মোবাইলে গেম খেলাকেই ‘অধঃপতন’-এর মূল হিসেবে দেখছেন। সোনাপুরহাট মহাত্মা গান্ধি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ধ্রুব তিওয়ারির বক্তব্য, ‘এখানে পরীক্ষার্থীদের একাংশ পরিযায়ী শ্রমিক। সারাবছর তারা বাইরে কাজ করে। শুধু পরীক্ষা দিতে বাড়ি আসে। এর প্রভাব পড়েছে তাদের পড়াশোনায়। টেস্টে সেভাবে কড়াকড়ি করা হয়নি।’ এমতাবস্থায় চোপড়ায় শিক্ষার দুরবস্থা নিয়ে আগামীদিনে যে আরও প্রশ্ন উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।