পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: চিন সীমান্তের (China Border) গ্রামগুলিতে এবার কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছে ভারত। লাদাখ থেকে অরুণাচল পর্যন্ত, দেশের ভৌগোলিক সীমানায় থাকা সমস্ত পর্বতশৃঙ্গে এখন থেকে প্রশিক্ষিত পর্বতারোহীদের অভিযানের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। মে মাস থেকে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত চিন সীমান্তে একের পর এক শৃঙ্গ অভিযান শুরু হবে ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে। প্রত্যেকটি ভারতীয় পর্বতারোহী দলের সঙ্গে থাকবেন ভারতীয় সেনা জওয়ানরা। নীতি আয়োগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, বিদেশমন্ত্রক, প্রতিরক্ষামন্ত্রকের কর্তারা ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের সঙ্গে বৈঠক করে অভিযানের রূপরেখা ঠিক করে দিয়েছেন। ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের সভাপতি কর্নেল বিজয় সিং দিল্লি থেকে জানান, যাঁরাই ভারত-চিন সীমান্তে পর্বত অভিযান করতে ইচ্ছুক তাঁদের ফাউন্ডেশন সবরকম সহযোগিতা করবে।
সূত্রের খবর, ভারতীয় সীমান্তবর্তী তাদের গ্রামগুলিতে বিভিন্ন পরিকাঠামো তৈরি সহ নানা ধরনের কাজকর্ম করছে চিন। তারই পালটা হিসাবে এবার সীমান্তবর্তী ভারতীয় গ্রামগুলিকে দেশের মূলস্রোতে আনতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেইজন্যই এই গ্রামগুলির দরজা এবার পর্যটকদের কাছে খুলে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে গ্রামগুলিকে। সীমান্তে নিজেদের প্রবল উপস্থিতি চিনকে জানান দিতেই এই কর্মসূচি।
ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী জুনে হিমাচলপ্রদেশের চিন সীমান্তে গাংছা ও শিপকি এবং মে অথবা সেপ্টেম্বর মাসে উত্তরাখণ্ডের গুঞ্জি ভ্যালি অভিযান হবে। কাশ্মীরের হারমুকে মে বা জুন মাসে, অরুণাচলের গোরিচেন সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে এবং সিকিমের উমাথাং কাশাং চে ও গোরালে শৃঙ্গ অভিযান করা হবে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বা অক্টোবর মাসে।
ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য ভাস্কর দাস জানান, এই নির্দিষ্ট করে দেওয়া শৃঙ্গের বাইরেও সীমান্তবর্তী অন্য শৃঙ্গে অভিযান করা হবে। বিভিন্ন প্রশিক্ষিত ক্লাব বা সংস্থা এবং প্রশিক্ষিত পর্বতারোহীরা চাইলে এই অভিযানে অংশ নিতে পারেন। বিভিন্ন সরকারি ছাড়পত্র জোগাড়ে ফাউন্ডেশন তাঁদের সহযোগিতা করবে। সামান্য ফি দিয়ে এই অভিযানের ব্যবস্থা করে দেবে ফাউন্ডেশন। ব্যবস্থা থাকছে পর্বতারোহীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার।
ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে চিন সীমান্তে এই ধরনের পর্বত অভিযান আগে হয়নি। ডোকালাম, নাথু লা থেকে লাদাখ, তাওয়াংয়ের মতো সীমান্ত এলাকায় ভারত ও চিনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই লেগেই থাকে। দুই দেশের মধ্যে কুটনৈতিক স্তরে তর্কবিতর্ক, এমনকি বিরোধ মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে সীমান্তের গ্রামগুলিতেই দেশের আমজনতার যাতায়াতে কড়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ভারতে। কিন্তু চিন নিজের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ভারতকে চাপে রাখে। চিনকে পালটা চাপে রাখতে মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নিজের সীমান্তবর্তী এলাকায় পর্বতশৃঙ্গ অভিযানের কর্মসূচি এবারই প্রথম নিল ভারত। অভিযানের আগে থেকে ভারত-চিন সীমান্তে ভারতীয় সেনার তৎপরতা আরও বাড়বে। পর্বতারোহীদের যাতে এই ধরনের স্পর্শকাতর এলাকায় শৃঙ্গ অভিযানে কোনও সমস্যা না হয় তার সুরক্ষার জন্য ভারতীয় সেনার বাছাই করা টিম থাকছে।
ফাউন্ডেশন থেকে গত ৭ তারিখ দিল্লিতে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। চিন সীমান্তের ভারতীয় এলাকার পর্বতশৃঙ্গ অভিযানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এতদিন ভারতীয় সীমান্তের গ্রাম ও এলাকায় কোনও কর্মসূচি গৃহীত হয়নি। এবার কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ভারত-চিন সীমান্তের ভারতীয় এলাকায় ভারতীয় পর্বতশৃঙ্গগুলিতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে সংলগ্ন গ্রামগুলিতে কর্মকাণ্ড বাড়াতে।