মোস্তাক মোরশেদ হোসেন ও প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার ও বীরপাড়া: কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পর বীরপাড়ার (Birpara) বড় হাওদা এলাকার সেই আশ্রম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানকার আবাসিকদের সরিয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে। সোমবার রাতেই আশ্রমের বিভিন্ন কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হয়। নাবালক ও নাবালিকাদের উদ্ধার করতে সিডব্লিউসি সহ জেলা প্রশাসনের বিশেষ টিম ঘটনাস্থলে যায়। পরিবারের সম্মতি থাকলে সেই পড়ুয়াদের বাড়ি পাঠানো হতে পারে। আর অভিভাবকহীনদের হোমে রাখতে চাইছে প্রশাসন।
আশ্রমের পাঁচ নাবালিকাকে রবিবার রাতে ক্ষুদিরামপিল্ল এবং দিনবাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করে বীরপাড়া থানার পুলিশ। ওই নাবালিকাদের দিয়ে গা টেপানো সহ নানা আপত্তিকর কাজ করানো হত বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে তৎপর হয় আলিপুরদুয়ার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। ২৭ জন ছিল ওই আশ্রমে। পাঁচজনকে সোমবারই জিম্মায় নেয় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। মঙ্গলবার বাকিদের বের করে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় বীরপাড়া থানার পুলিশ। রাত ৮টা পর্যন্ত আশ্রমের বাইরে পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গিয়েছে। বীরপাড়া থানা সূত্রের খবর, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে আশ্রম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কারণ ঘটনা নিয়ে তাদের বক্তব্য অসংগতিপূর্ণ। পাশাপাশি আরও একটি বড় অনিয়ম সামনে এসেছে। নাবালক এবং নাবালিকাদের একই জায়গায় রাখা হত বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। অথচ নিয়ম মোতাবেক নাবালক এবং নাবালিকাদের রাখার জায়গা পৃথক হওয়ার কথা। এদিকে আশ্রমের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ দীর্ঘদিন আগেই পেরিয়ে গিয়েছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ ছিল। পরবর্তীতে তা আর পুনর্নবীকরণ করা হয়নি।
এদিকে আশ্রমের কর্ণধার সরস্বতী শাস্ত্রীর দাবি, রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও কোনও আবাসিককেই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। গুরুকুলের রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক তরুণীর সঙ্গে ওই পাঁচ নাবালিকা চম্পট দেয় বলে দাবি সরস্বতীর।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, প্রশাসনের কাছে ওই আশ্রম নিয়ে নাকি কোনও তথ্যই নেই। অথচ আশ্রমে আবাসিক রাখতে গেলে একাধিক নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয়। সেই বিষয়গুলি মনিটরিং করার কথা শিশু সুরক্ষা দপ্তরের। অথচ ওই দপ্তরের কাছে বড় হাওদার আশ্রমটি সম্পর্কে কোনও তথ্যই ছিল না। এবার ওই নাবালক-নাবালিকাদের যাবতীয় তথ্য নথিভুক্ত করে কাউন্সেলিং করানো হবে, জানিয়েছে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি।
তাদের ওপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালানো হত কি না, কিংবা চালালে কী ধরনের নির্যাতন চালানো হত তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে। পাশাপাশি বয়স অনুযায়ী আলাদা আলাদা জায়গায় রাখা হবে ওই আবাসিকদের। বর্তমানে ওই আশ্রমে কতজন শিক্ষক, শিক্ষিকা ও কর্মী ছিলেন তা নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড়ে ব্যস্ত প্রশাসন। আশ্রম সূত্রে খবর, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ২৭ জনের পঠনপাঠন চলত সেখানে।