Birpara | সিংঘানিয়ায় প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ, সাংসদের বাগানে পানীয় জলের আকাল

Birpara | সিংঘানিয়ায় প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ, সাংসদের বাগানে পানীয় জলের আকাল

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


বীরপাড়া: সাতসকালে কাজ শুরুর আগে পানীয় জল সংগ্রহে এদিক-ওদিক ছুটতে হয় সিংঘানিয়া চা বাগানের শ্রমিকদের। ওই চা বাগানের আরেকটি ‘পরিচয়’ রয়েছে। আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গার বসতভিটে ওই বাগানেই। একসময় তিনি এখানেই কাজ করতেন। বর্তমানে পাকাপাকি সেখানে আর না থাকলেও ভোটার তালিকায় এখনও মনোজ ওই বাগানেরই ভোটার। অথচ খোদ সাংসদের বাগানেই পরিস্রুত জল আসে না সকলের ঘরে।

পানীয় জল সরবরাহে প্রকল্প তৈরির জন্য ২০২১ সালে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরকে জমি দিয়েছিল বীরপাড়ার সিংঘানিয়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সাল নাগাদ প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হয়। কয়েকমাস আগে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। প্রত্যেক শ্রমিকের বাড়িতে সংযোগ দেওয়ার কথা হলেও এখনও শতাধিক শ্রমিকের বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়নি। সংযোগ দেওয়া জনা পঞ্চাশেক শ্রমিকের বাড়িতে জল পৌঁছায়। তাও সেই জলের ‘গতি’ নেই বললেই চলে।

সমস্যা সমাধানে দৌড়াদৌড়ি কম হয়নি। বাগানের সিনিয়ার ম্যানেজার অরবিন্দ সিং জানালেন, পানীয় জল সরবরাহে খামতি নিয়ে এবছরের ১৫ এপ্রিল আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলা শাসকের কাছে এবং ২৯ এপ্রিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের আলিপুরদুয়ারের নির্বাহী বাস্তুকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপর দপ্তরের নর্দার্ন মেকানিক্যাল ডিভিশনের (২) নির্বাহী বাস্তুকার আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকারকে চিঠি পাঠিয়ে জানান, ওই প্রকল্পে ২টি পাম্প সহ অন্যান্য পরিকাঠামো রয়েছে। তবে পাইপলাইনের ত্রুটিতে সমস্যা হতে পারে। এনিয়ে নির্বাহী বাস্তুকারকে নজর দেওয়ার কথা বলা হয় চিঠিতে। ম্যানেজার বলেন, ‘পানীয় জলের সমস্যার অভিযোগ জানাতে প্রতিদিন শ্রমিকরা অফিসে আসছেন। আমার বাংলোতেও সংযোগ দেওয়া হয়নি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরকে জমি দিয়ে তো লাভই হল না।’

তবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের আলিপুরদুয়ারের নির্বাহী বাস্তুকার ধীরাজ মণ্ডল বলছেন, ‘সিংঘানিয়ার বেশিরভাগ বাড়িতে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকিগুলিতেও সংযোগ দেওয়া হবে। তবে প্রকল্পের মাধ্যমে কেবলমাত্র পান করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল সরবরাহ করা হবে। স্নান বা অন্যান্য কাজের জন্য নয়।’

মনোজের পুরোনো বাড়ি ঘেঁষে বাগানকর্মী দুর্গাপ্রসাদ শর্মার বাড়ি। তাঁর কথায়, ‘আমার বাড়িতে এখনও সংযোগ দেওয়া হয়নি। পানীয় জলের তীব্র সংকটে ভুগছি।’ হাটখোলা লাইনের মেনুকা শর্মা বলেন, ‘আমার বাড়িতেও সংযোগ দেওয়া হয়নি। আমাদের ভরসা বাগান থেকে নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করা অল্প পরিমাণ জল। মাঝে মাঝে পান করার জল কিনেও আনতে হয়।’

পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি সমীক্ষা হয়েছে সিংঘানিয়ায়। সেখানে ১০১টি বাড়িতে এখনও সংযোগ দেওয়া হয়নি। আর সংযোগ দেওয়া হলেও ৪৩টি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছায় নামমাত্রই। ওই চা বাগানে কমবেশি ৭০০ জন শ্রমিক কর্মচারী রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৫৪৩ জন কাজ করেন।

সমস্যার কথা অবশ্য সাংসদ জানেন। মনোজ বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সিংঘানিয়ায় প্রাতর্ভ্রমণের সময় শ্রমিকদের মুখে পানীয় জলের সমস্যার কথা শুনি। কেন্দ্রীয় সরকারের জলজীবন মিশনের টাকা রাজ্য সরকার জলস্বপ্ন নাম দিয়ে খরচ করছে। কিন্তু সিংঘানিয়া চা বাগানে ওই প্রকল্প রূপায়ণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। ফল ভুগতে হচ্ছে শ্রমিকদের।’

এদিকে, বাগানকর্মী তথা তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের বাগান ইউনিটের সম্পাদক ফারহাদ আলির বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকার প্রত্যেকটি চা বাগানে পানীয় জল সরবরাহে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু সিংঘানিয়ায় ‌ঠিকাদারের গাফিলতিতে পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে।’

বাগানে গিয়ে দেখা গেল, হাটখোলা লাইনে বাগান কর্তৃপক্ষের বসানো পাইপের মুখে ভিড়। সেখানেই আসুন্তা লাকড়া, মুলের চিকবড়াইকরা জানালেন, সকালবেলা জল সংগ্রহে বিরাট লাইন পড়ে যায়। ওঁদের বাড়িতেও পিএইচই পাইপলাইন সংযোগ দেয়নি। সীমা কুজুরের বাড়ির সামনের ট্যাপকল থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ছে। ‘এক বালতি জল সংগ্রহে প্রায় কুড়ি মিনিট সময় লাগছে।’ বললেন তিনি।

বীরপাড়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার গৌরব বল আশ্বাস দিচ্ছেন, ‘বাগানের বাকি বাড়িগুলিতে সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *