ময়নাগুড়ি ও বীরপাড়া: মহাসড়ককে গাড়িচালকরা যে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ব্যবহার করছেন এবং তাতে ট্রাফিক পুলিশের যে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, তার নমুনা ফের একবার উঠে এল সোমবারের একাধিক দুর্ঘটনায়। এরমধ্যে একটি ঘটনায় অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা এক রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। ঘটনা দুটি ঘটেছে ময়নাগুড়ির ঝাঝাঙ্গি ও বীরপাড়ার ডিমডিমা চা বাগান এলাকায়।
বাড়িতে পড়ে গিয়ে হিপ জয়েন্ট ভেঙে গিয়েছিল বীরপাড়া এসসি কলোনির মীরা দাসের। সোমবার সকালে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে শিলিগুড়িতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন ছেলে কৃষ্ণেন্দু দাস, পুত্রবধূ মুনমুন দাস, নাতি অরিত্র দাস এবং নাতির দুই বন্ধু সায়ন দেব ও শিবায়ন বক্সী। পথে ময়নাগুড়ি ঝাঝাঙ্গি ফ্লাইওভার পেরিয়ে পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের হলহলিয়া এলাকায় একটি চলন্ত ট্রাকের পেছনদিকে অ্যাম্বুল্যান্সটি দ্রুতগতিতে ধাক্কা মারে। ঘটনায় অ্যাম্বুল্যান্সটি পুরোপুরি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মৃত্যু হয় মীরাদেবীর (৭৫)। চালক গণেশ দেবনাথ সহ প্রত্যেকেই গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
অন্যদিকে, ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়ের মাদারিহাট, বীরপাড়া এবং ফালাকাটা এলাকায় বিনা বাধায় টোটো চলাচল অব্যাহত। প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছে টোটো। সোমবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই মহাসড়কে বীরপাড়া থানার ডিমডিমা চা বাগান এলাকায় টোটো এবং বাইকের সংঘর্ষে আহত হন টোটোর যাত্রী আরবিন এক্কা এবং বাইকচালক মানিক বর্মন। প্রশাসন এর আগে বহুবার বলেছে হাইওয়েতে টোটো চলাচল নিষিদ্ধ, কিন্তু সেকথা শুনছে কে? মাদারিহাট এবং বীরপাড়ার মধ্যে মহাসড়কে কয়েকশো টোটো চলাচল করে। বীরপাড়া বাসস্ট্যান্ড ম্যাক্সিক্যাবস্ট্যান্ড থেকে যাত্রী তুলে রাঙ্গালিবাজনা, শিশুবাড়ি, মাদারিহাট এমনকি হাসিমারা পর্যন্ত চলাচল করে টোটো। অন্যদিকে, বীরপাড়া থেকে মহাসড়ক হয়ে এথেলবাড়ি, গয়েরকাটা, তেলিপাড়া এমনকি ধূপগুড়ি পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণ করে অনেক টোটো। এমনকি টোটোয় পণ্য পরিবহণও চলছে। এগুলি মাঝে মাঝেই হয় দুর্ঘটনায় পড়ছে, নয়তো অন্যকে দুর্ঘটনায় ফেলছে। এবছরের ২৩ মার্চ ডিমডিমা চা বাগানেই বাইক ও টোটোর সংঘর্ষে আহত হন টোটোর তিন যাত্রী। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর এথেলবাড়িতে একটি ছোট গাড়ির ধাক্কায় টোটোর ছাদ উড়ে যায়। আহত হন টোটোচালক। গত বছরের ৪ অক্টোবর রাতে হলংয়ে মহাসড়কে গাড়ির ধাক্কায় আহত হন বীরপাড়ার টোটোচালক লালবাহাদুর মাহাতো। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালের ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাঙ্গালিবাজনায় টোটোর ধাক্কায় গুরুতর আহত এক বৃদ্ধ ৩১ অক্টোবর মারা যান। ২০২১ সালের ১১ অগাস্ট মাদারিহাটে ট্রাকের ধাক্কায় টোটোচালক গুলজার আলি এবং ওই বছরেই ২৮ নভেম্বর দলদলিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় টোটোচালক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের মৃত্যু হয়। এরপরও টোটোয় নিয়ন্ত্রণ নেই প্রশাসনের।
ঘটনা হল, হাজার হাজার মানুষ টোটো চালিয়ে রুজিরুটির সংস্থান করছেন। মহাসড়কে টোটো চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধে পদক্ষেপ করা হলে গণরোষের সম্ভাবনা। ফলে কড়া হতে পারছে না প্রশাসন। বীরপাড়া থানার ওসি নয়ন দাস এ ব্যাপারে মন্তব্য করেননি। তবে বীরপাড়ার ট্রাফিক ওসি সিজান মোচারি বলেন, ‘মহাসড়কে টোটো চালাতে চালকদের নিষেধ করা হচ্ছে। টোটো চলাচল বন্ধে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষা করছি।