উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, আস্থা-নির্মাণের পদক্ষেপ (confidence-building measure) হিসেবে হাফিজ সইদ এবং মাসুদ আজহারের মতো সন্ত্রাসীদের ভারতে প্রত্যর্পণে পাকিস্তানের কোনও আপত্তি নেই। তবে, বিলাওয়ালের এই মন্তব্য হাফিজ সইদের ছেলে তালহা সইদের মোটেও ভালো লাগেনি। তাঁর মতে, এই মন্তব্য বিশ্বজুড়ে পাকিস্তানের সম্মানহানি করেছে।
শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে বিলাওয়াল বলেন, ‘যদি ভারত এই প্রক্রিয়ায় “সহযোগিতা” করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে পাকিস্তান “গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের” ভারতে প্রত্যর্পণ করতে প্রস্তুত।’ মুম্বই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হাফিজ সইদ (লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান) এবং জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বিস্তারিত আলোচনার অংশ হিসেবে, যেখানে সন্ত্রাসবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমি নিশ্চিত যে পাকিস্তান এর বিরোধিতা করবে না।”
লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মুহাম্মদ উভয়কেই পাকিস্তান সরকার নিষিদ্ধ করেছে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম অথরিটি (Nacta) । ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হাফিজ সইদ বর্তমানে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের দায়ে ৩৩ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। অন্যদিকে, জাতিসংঘ-ঘোষিত সন্ত্রাসী মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে নাকটা(Nacta)।
ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের মধ্যে মাসুদ আজহারের নাম রয়েছে। ২০০১ সালের সংসদ হামলা, ২৬/১১ মুম্বাই হামলা, ২০১৬ সালের পাঠানকোট বিমানঘাঁটি হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ ভারতের বেশ কয়েকটি বড় হামলার সঙ্গে তার নাম জড়িত। ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৮১৪ কান্দাহার হাইজ্যাকিংয়ের বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে তাকে ভারতীয় হেপাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
বিলাওয়াল অবশ্য দাবি করেছেন যে, এই “ব্যক্তিদের” বিরুদ্ধে পাকিস্তানে যে মামলাগুলো চালানো হয়েছে, সেগুলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়, যেমন সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন। তিনি আরও বলেন, সীমান্ত-সন্ত্রাসবাদের জন্য হাফিজ সইদ এবং মাসুদ আজহারের বিচার করা কঠিন, কারণ ভারতের পক্ষ থেকে “অসহযোগিতা” রয়েছে। তার দাবি, “ভারত কিছু মৌলিক বিষয় মানতে রাজি হচ্ছে না।ভারতীয় সাক্ষীদের পাকিস্তানের আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে।যদি ভারত এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক হয়, আমি নিশ্চিত যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণে কোনও বাধা থাকবে না।”
হাফিজ সইদ এবং মাসুদ আজহারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিলাওয়াল বলেন যে, লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান কারাগারে রয়েছেন। আর ইসলামাবাদের ধারণা, জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান আফগানিস্তানে আছেন। তিনি দাবি করেন, “হাফিজ সইদ মুক্ত মানুষ, এটি তথ্যগতভাবে সঠিক নয়। তিনি পাকিস্তানের হেপাজতে আছেন।” তিনি স্বীকার করেন যে, পাকিস্তান মাসুদ আজহারকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।এরপর বিলাওয়াল বেশ জোর দিয়েই বলেন, “আমাদের বিশ্বাস যে সে আফগানিস্তানে আছে। যদি ভারত সরকার এই তথ্য দেয় যে, সে পাকিস্তানের মাটিতে আছে, আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পেরে খুশি হব।”
এদিকে বিলাওয়ালের মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হাফিজ সইদের ছেলে তালহা সইদ বলেন, পিপিপি নেতার এমন মন্তব্য করা উচিত হয়নি। তিনি এও দাবি করেন যে, হাফিজ সইদকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়ে এই মন্তব্য বিশ্বজুড়ে পাকিস্তানের সম্মানহানি করেছে।