মানিকচক: আশঙ্কাই সত্যি হল। বুধবার সকালে ফুলহরের জলের তোড়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল এক কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত বাঁধ। তবে জলের স্রোতে বাঁধ ভাঙলো না গত বছরের মতো রাতের অন্ধকারে কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবে বাঁধ কেটে দিল, তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। শুধুমাত্র ভূতনির সাধারণ মানুষ নয় এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর চরমে। খোদ মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের অভিযোগ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সিপিএম কংগ্রেস বিজেপি মিলিতভাবে ষড়যন্ত্র করে রাতের অন্ধকারে দক্ষিণ চন্ডিপুরের বাঁধ কেটেছে।
পাল্টা অভিযোগ বিরোধীদেরও। সিপিএম ও বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ কোটি কোটি টাকা লুটপাট করতে শাসক দল ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা মিলিতভাবে বাঁধ কেটেছে। যদিও ফুলহরের জলের প্রচন্ড স্রোতে বাঁধ ভেঙেছে বলে দাবি প্রশাসনের। বুধবার সকালে ভাঙা বাঁধের প্রস্থ মাত্র কয়েক মিটার হলেও কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে বাঁধের প্রস্থ গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ মিটার। আর এই ভাঙা অংশ দিয়ে হু হু করে প্রচন্ড বেগে ফুলহরের জল ঢুকতে শুরু করেছে ভূতনির বিস্তীর্ণ এলাকায়। আশঙ্কা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভূতনির বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলের তলায় থাকবে।
অন্যদিকে ভূতনির হিরানন্দপুর অঞ্চলের কালুটোনটোলার কাছে ফুঁসছে গঙ্গা। নতুন রিং বাঁধ বরাবর জল। নতুন বাঁধের নিচ দিয়ে অল্প অল্প করে জল ঢুকতে শুরু করেছে সংরক্ষিত এলাকায়। কোনওরকমে বালির বস্তা দিয়ে জল আটকানোর চেষ্টা করছে সেচ দপ্তর। সেই বাঁধের উপর বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছে অসংরক্ষিত এলাকার পাঁচটি গ্রামের প্রায় আট শতাধিক পরিবার। যে কোনও মুহূর্তে গঙ্গার প্রচন্ড স্রোতে নতুন রিং বাঁধ ভেঙে ভূতনির বিস্তীর্ণ এলাকায় জল ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ। আর এই আশঙ্কা সত্যি হলে গঙ্গা ও ফুলহর এই দুই নদীর মিলিত প্লাবনে জলের তলায় যাবে সমগ্র ভূতনি। গত বছরের চেয়েও ভয়ংকর বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
গত কয়েকদিন আগে থেকেই হলুদ সতর্কতা অতিক্রম করে বইছে ফুলহর। বুধবার সকালের হিসেব অনুযায়ী, ফুলহরের জলস্তর ২৮.২১ মিটার যা চরম বিপদসীমা থেকে মাত্র ১৪ সেন্টিমিটার নিচে। অপরদিকে গঙ্গা চরম বিপদসীমা থেকে ৭১ সেন্টিমিটার উঁচুতে বইছে। গতবছর বন্যার সময় ভূতনির বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়লে লোকালয় থেকে জল নিকাশির উদ্দেশ্যে রাতের অন্ধকারে ভুতনির একদল মানুষ ভূতনি দক্ষিণ চন্ডিপুর সুইচগেটের কাছে বাঁধ কেটে দেয়। পরে সেই বাঁধের কাটা অংশ দিয়ে ফুলহরের জল ঢুকে প্লাবিত করে ভূতনির বিস্তীর্ণ এলাকা।
বন্যা পরবর্তী সময়ে ভূতনি সফরে আসেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ মন্ত্রী মানস ভূঁইয়া। দক্ষিণ চন্ডিপুর কাটা বাঁধে নতুন বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সেচ দপ্তর। বরাদ্দ হয় প্রায় এক কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। জল নিকাশি ব্যবস্থা সহ নতুন বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র পাঁচ মাস আগে। আর ফুলহরের জল বাড়তেই বাঁধের এই হাল। বুধবার সাত সকালে বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে। নিম্নমানের কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামে এলাকার বেশ কিছু যুবক। আন্দোলন ফলস্বরূপ প্রতিবাদী যুবকদের নামে মিথ্যা মামলাও হয় বলে অভিযোগ। বর্তমানে প্রচন্ড স্রোতে ফুলহরের জল ঢুকছে ভূতনির বিস্তীর্ণ এলাকায়। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভূতনির পুলিনটোলা ঢাপ এলাকা সহ উত্তর চন্ডিপুর ও দক্ষিণ চন্ডিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রামগুলি জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা। বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে ঘটনার স্থলে ছুটে যান রাজনৈতিক নেতারা। ছুটে আছেন সেচ দপ্তরের আধিকারিক সহ প্রশাসনিক কর্তারা। বিজেপি নেতা গৌড় চন্দ্র মণ্ডল, সিপিআইএম জেলা নেতা দেবজ্যোতি সিনহা এমন পরিস্থিতির জন্য শাসক দল ও প্রশাসনিক কর্তাদের দুষছেন। ম্যান মেড ফ্লাড বলে দাবি বিরোধীদের।