Berhampore | মহরম মাসে ‘অবহেলায়’ সিরাজের সমাধি, মৃত্যুদিবস পেরোলেও শ্রদ্ধা জানাতে পারলেন না বংশধররা

Berhampore | মহরম মাসে ‘অবহেলায়’ সিরাজের সমাধি, মৃত্যুদিবস পেরোলেও শ্রদ্ধা জানাতে পারলেন না বংশধররা

শিক্ষা
Spread the love


পরাগ মজুমদার, বহরমপুর: চোখেমুখে আক্ষেপের সুর! আর হবে নাই বা কেন। এবছর বাংলা-বিহার-ওডিশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদদৌলার মৃত্যুদিবসে লালবাগের খোশবাগের সমাধিস্থলে হাজির হতে পারলেন না নবাবের বংশধর রেজা আলি মির্জা ওরফে ছোটে নবাব। তাঁর কথায়, ‘গত ২৭ জুন আরবি ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসারে আল মহরম শোকের মাস শুরু হয়েছে। ইসলাম ধর্মে অন্যতম পবিত্র মাস হচ্ছে এই আল মহরমের মাস। রীতি অনুযায়ী বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানে যোগদান করা যায় না। তাই সমাধিস্থলে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানো গেল না এবার। ওখানে যেতে না পারায় ছেদ পড়ল প্রথায়।’ ছোটে নবাব বলেন, ‘জ্ঞান হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর আমি নিজে সিরাজ-উদদৌলার মৃত্যুদিবসে খোশবাগে গিয়ে তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে আসি। কিন্তু এবছর মহরম মাস চলার জন্য সেই কাজ করতে পারলাম না।’ নবাব পরিবারের আরেক বংশধর ফাহিম মির্জারও বিষয়টিতে আক্ষেপের শেষ নেই। ২ জুলাই সিরাজকে হত্যা করা হলেও গোটা সপ্তাহ ধরেই তাঁর সমাধিতে পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা জানান।

ভাগীরথীর পাড়ে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন সিরাজ-উদদৌলা। ভারত সরকারের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা এই জায়গাটি কার্যত রয়েছে প্রচারের আড়ালেই। তারপরেও তাঁর মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধা জানাতে মুর্শিদাবাদবাসীর মধ্যে কোনও খামতি ছিল না। জৌলুসহীনভাবে হলেও লাল জবা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন অনেকেই। এক বর্ণময় ইতিহাসের উজ্জ্বল চরিত্র বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ। নবাব আলিবর্দি খাঁ-র দৌহিত্র হিসেবে তিনি বাংলায় বর্গী আক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সেই সময় নজরে এসেছিলেন তাঁর পারিষদবর্গের। সিংহাসনে বসেই এই তরুণ নবাব দেখতে পান, বাংলা-বিহার-ওডিশায় কিছু কুচক্রীর সঙ্গে মিলে দেশের স্বাধীনতায় থাবা বসাতে উদ্যোগী বিদেশি বণিক শক্তি ইংরেজরা। একদিকে মিরজাফর ও আরও অনেকে মিলে তাঁকে গদিচ্যুত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। তরুণ নবাব এদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে পাশে কাউকেই পাননি। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু দুজন মির মদন ও মোহনলাল। নবাব মিরজাফরকে চিহ্নিত করে প্রথমে তাঁর সেনাপতির পদ কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। আর উমি চাঁদ, রায়বল্লভদেরও বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এই সময় তাঁকে সওকত জঙ্গ, ঘসেটি বেগমদের বিরুদ্ধেও লড়তে হচ্ছিল। ঘরে-বাইরে সর্বত্র লড়াইয়ের জন্য নামতে হয়েছিল তাঁকে। এরপরই ইংরেজ ও ভারতীয় চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি পলািশর যুদ্ধে পরাজিত হন। পরে তাঁকে হত্যা করা হয়। মিরজাফরের ছেলে মিরনের নির্দেশে মহম্মদ আলি বেগ এই মুর্শিদাবাদের লালবাগ শহরের নিমকহারাম দেউড়ির কাছে সিরাজের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। যা বর্তমানে মুর্শিদাবাদ শহরে ভাগীরথী নদীর  তীরে খোশবাগে সিরাজের সমাধি হিসেবে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তরফে অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

লালবাগ শহরের বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক সুনীল সরকার বলেন, ‘আজকের প্রজন্ম অনেকের কাছেই নবাব সিরাজ-উদদৌলা নিছক একটা নাম। তবে যাঁরা এই শহরকে খানিকটা হলেও চেনেন জানেন তাঁদের মনে, মগজে সিরাজ-উদদৌলা আজীবন জীবিত থাকবেন।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *